• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে মাটি কাটার ধুম

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩  

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। শীত আসার পরপরই শুরু হয়েছে এই মাটি কাটা। ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত শামসুল হক সেতুর নিচে এবং নদী পাড়ের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রাত-দিন শত শত ট্রাক্টর ওঠানামা করছে। নদীর ভেতরের মাটি কাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধ, সড়ক ও সেতু। তবে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় আমরা যাওয়া মাত্রই বালু ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। ফলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয় না। প্রশাসন অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও অসাধু কিছু বালু ব্যবসায়ীরা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অবাধে নদীর পাড় কেটে বিক্রি করছে।


স্থানীয় লোকজন জানান, শামসুল হক সতেুর নিচে এবং সেতুর ডান পাশের এক কিলোমিটার এবং বাম পাশের হাফ কিলোমিটার এলাকায় দিন-রাতে প্রায় শত শত ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে। এই মাটি ইটভাটা, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল ছাড়াও ৩০ থেকে ৩৫ জন যে যার মত মাটি কেটে বিক্রি করছে। আর এ মাটি আনা নেওয়ার কারনে নদীর বাঁধও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অপরদিকে অধিক পরিমানে ট্রাক্টর চলাচলে টাঙ্গাইল-নাগরপুর-আরিচা আঞ্চলিক মহাসড়কসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাটও নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন এলাকায় ধলেশ^রী নদীর উপর নির্মিত শামছুল হক সেতুর পিলারের কাছ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়াও সেতুর ডান ও বাম পাশের পাড় থেকে ২০ টি ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে মাটি কেটে নিচ্ছে বালু ব্যবসায়ীরা। এলাসিন এলাকার প্রভাবশালী শাহিন ও আজিম ১০ থেকে ১২টি মাটির ঘাট করেছে। এখান থেকে দিনে-রাতে কয়েকশত ট্রাক্টর দিয়ে মাটি কাটছে। ফলে হুমকির মধ্যে রয়েছে সেতু। ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি নেওয়ার কারনে পাকা সড়ক এখন ধুলার রাজ্যে পরিনত হয়েছে। ধুলাবালির কারনে এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদের নানা দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। অপরদিকে ট্রাক ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে এই মাটি নিয়ে দেলদুয়ার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় যাওয়ার কারনে রাস্তাঘাটও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অপরদিকে অবাধে মাটি কাটায় সেতুর পাশাপাশি নদীর দুই পাড়ের নদী রক্ষা বাঁধও হুমকির মুখে পড়েছে।


জানা গেছে, ওই সকল বালু ব্যবসায়ীদের মধ্যে বড় ব্যবসায়ী শাহিন ও আজিম। এলাসিন ঘাটপাড় এলাকায় রয়েছে তাদের নিজস্ব অফিস। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ মাটির ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। তাদের ছাড়াও আরো কয়েকজনের অফিস রয়েছে সেখানে।

কয়েকজন ট্রাক্টরচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নদীর পাড়ের ২০ ঘাট থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। এলাসিন এলাকার খালেক, সাজ্জাদ, শাহিন, শামীম, ঠান্ডু, আজিম, শরিফ, দুলাল, তোফাসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন ব্যক্তি মাটি কেনাবেচা করছেন। মাটি বিক্রেতা ও ট্রাক্টর চালক দুলাল বলেন, আগামী বন্যায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিবে জানি, তারপরও করছি। আমরা গরিব মানুষ। কিছু একটা করে তো খেতে হবে। নদীর চর জেগে থাকে, আমরা তো আর নদীর মাঝ খান থেকে মাটি কাটছি না। পাড় থেকে মাটি নিচ্ছি। আর এটা সব জায়গায় ম্যানেজ করেই করা হচ্ছে। আমি ছাড়াও আরো অনেক মানুষ আছে এই মাটি কেটে বিক্রি করছে। এখানে তো আমি একা না। আতাউর রহমান বলেন, সেতুর দুই পাশ থেকে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে করে শামসুল হক সেতু হুমকির মুখে পড়ছে। আমরা চাই এই মাটি কাটা বন্ধ হোক।


তবে এ বিষয়ে মাটি ব্যবসায়ী শাহিনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অপর বালু ব্যবসায়ী আজিম হোসেন জিতু বলেন, আপনারা পরে আমার সাথে কথা বইলেন। আমি তো আর একা সব করি না। সকলকে ম্যানেজ করেই মাটির ব্যবসা করতে হয়। আমার লোক যাবে আপনার কাছে। আর আমরা নদীর মাটি কাটছি না। নদীর পাড়ে মালিকানা জায়গা থেকে মাটি কিনে তারপর বিক্রি করছি। আপনারা দেখা কইরেন, কথা বলবোনি।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা আলী বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এরআগে অনেক বালুর ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা কোন অবৈধ বালু ব্যবসায়ীকে ছাড় দেবো না। তবে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে বালু ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। ফলে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা সজাগ রয়েছি। কোথাও অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পাওয়া মাত্র তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অবৈধ এসকল বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। শামসুল হক সেতুর পাশ থেকে যারাই মাটি উত্তোলন করুক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল