• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

দেলদুয়ারে যুদ্ধের আদলে শেষ হলো সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত মহড়া

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৫ জানুয়ারি ২০২৩  

ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে শীতল হাওয়া। এরমাঝেই শত্রুপক্ষকে টার্গেট করে সেনাবাহিনীর মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ। হুংকার ছেড়ে এগোতে থাকে কামান বিধ্বংসী ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়াসহ এপিসি। চলে ‘মাইন অ্যাটাক’ ও গ্রেনেডের বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা। কুয়াশার সঙ্গে গোলাবারুদের ধোঁয়ায় আকাশ কালো হয়ে উঠে। দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায় সেনাবাহিনী। এক পর্যায়ে অপারেশনে যোগ দিয়ে সরাসরি নেতৃত্ব দেন স্বয়ং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এরপরই চূড়ান্ত আক্রমণের মধ্য দিয়ে মিলে যায় কাঙ্ক্ষিত বিজয়।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে এভাবেই যুদ্ধের আদলে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শীতকালীন প্রশিক্ষণ মহড়া ‘নব উদ্যোগ’র চূড়ান্ত মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে সেনাবাহিনীর এই প্রশিক্ষণ মহড়া ছিল যেন স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিজাগানিয়ার মত। 


চূড়ান্ত মহড়া শেষে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। তারই ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও। স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে মিলিয়ে সেনাবাহিনীও স্মার্ট হবে এটাই কাম্য। সেনাবাহিনীকে আরো স্মার্ট করার জন্য যত জায়গায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে, সেগুলো আমরা বাড়াচ্ছি। সামগ্রিক সবক্ষেত্রে 'ডিজিটালাইজেশনের যে অ্যাডভানটেজ', সেটা আমরা নিচ্ছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যতটা স্মার্ট করা দরকার, সেটা আমরা নিচ্ছি।’

সেনাবাহিনীতে আধুনিকায়ন ও প্রশিক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, ‘শীতকালীন প্রশিক্ষণ আজ (বৃহস্পতিবার) শেষ হচ্ছে। এ ধরণের একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে অনেক কিছু করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, প্রশিক্ষণে জোর দাও। আমরা উনার নির্দেশনা মোতাবেক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধি করে 'ফোর্সেস গোল ২০৩০' অর্জনের লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো সেনাবাহিনী কোনো যুদ্ধ জয় করতে পারেনি জনগণের সমর্থন ছাড়া। আমাদের দেশের মানুষ যাতে সেনাবাহিনীর ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখে এবং আমরা যাতে সবসময় তাদের সার্বিক সহযোগিতা পাই সে জন্য আমরা সবসময় জনগণের ভেতরে থাকার চেষ্টা করি।’


সরেজমিনে দেখা যায়, দেলদুয়ার উপজেলার দশকিয়া, মঙ্গলহর, আরোরা ও পাথরাইল গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা নিয়ে বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় শীতকালীন প্রশিক্ষণ মহড়া ‘নব উদ্যোগ’র চূড়ান্ত অনুশীলন। এসময় সাঁজোয়া ট্যাংক ও এপিপির হুঙ্কার, মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ ও গ্রেনেডের বিকট শব্দে পুরো এলাকায় যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। চলাকালে উৎসুক স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন প্রান্তে জড়ো হন। অনুশীলনে হামলা-পাল্টা হামলাসহ নানা দক্ষতা প্রদর্শন করা হয়। এসময় বিকট শব্দে প্রকম্পিত হতে থাকে। সবশেষে সেনাবাহিনী প্রধান সিগন্যাল পিস্তলে ফায়ার করে মহারায় বিজয় লাভের জানান দিলে সৈনিকদের মধ্যে ব্যাপক উল্লাস দেখা যায়। বিজয় স্লোগান দিতে থাকেন সেনা সদস্যরা।

দেলদুয়ার উপজেলার মঙ্গলঘর গ্রামের এক প্রান্তে আরো অনেকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে এই যুদ্ধ মহড়া দেখছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক মোঃ শাহজাহান মিয়া। এ সময় জানতে চাইলে তিনি সময়ের আলোকে বলেন, 'আগে যুদ্ধ দেখিনি, এবার যেন নিজ চোখে যুদ্ধ দেখলাম। বিকট শব্দে তো ভয়ই লাগছিল। আমাদের সেনাবাহিনী অনেকটা এগিয়েছে। নিজেরই ভালো লাগছে।’


দশাকিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আকরাম আলী বলেন, ‘সেনাবাহিনীর শীতকালীন এই মহড়া দেখে সেইসময়ের (১৯৭১ সাল) মুক্তিযুদ্ধের কথায় বারবার মনে পড়ছিল। তখন আমাদের দেশের সেনাবাহিনী বা কারো কাছে এতো আধুনিক অস্ত্র বা এইসব (যুদ্ধ সরঞ্জাম) ছিল না। এখন তো আমরা অনেক এগিয়ে গেছি, দেখতেই পাচ্ছি।’

দেখা যায়, চূড়ান্ত মহড়ার পর সেনাপ্রধান সেখানে এক সেনা সমাবেশে সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি সৈনিকদের নানা উপদেশমূলক কথা বলেন। সবশেষে একই ভ্যেনুতে আয়োজিত দুপুরের খাবারের আয়োজন হলে সেখানেও তিনি সৈনিকদের কাছে গিয়ে খাবারের মান দেখাসহ তাদের ব্যক্তিগত খোঁজখবর নেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, চূড়ান্ত এ মহড়ার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) শেষ হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন সপ্তাহব্যাপী পরিচালিত শীতকালীন প্রশিক্ষণ ২০২২-২০২৩ ‘অনুশীলন নবউদ্যোগ’। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর শীতকালীন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সেনাসদর ও সেনাবাহিনীর সকল ফরমেশন পূর্ণাঙ্গরূপে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয়েছিল। অনুশীলনে সাঁজোয়া বহর, এপিসির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার্স কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং পদাতিক ও অন্যান্য কোরের সমন্বয়ে শত্রু অবস্থানের উপর আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। 

চূড়ান্ত অনুশীলন মহড়াকালে আরও উপস্থিত ছিলেন- সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম এবং আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, নবম পদাতিক ডিভিশন ও সাভার এরিয়া কমান্ডারসহ সেনাসদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, ডিফেন্স জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিজাব) সাংবাদিকবৃন্দ এবং অন্যান্য গণমাধ্যম কর্মীরা।

আইএসপিআর জানায়, প্রতি বছরের মতো এ বছরও শীতকালীন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ফরমেশনগুলো স্ব-স্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় অসহায় ও দুস্থ-শীতার্ত মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র ও ত্রাণ বিতরণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং ওষুধ বিতরণসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশুর বিনামূল্যে চিকিৎসা, পরামর্শ প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করেছে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রেই জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে সেনাবাহিনী।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল