• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল
সর্বশেষ:
বকশীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের উপর হামলা: একজন গ্রেপ্তার রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন ইসলামপুরে কৃষকরা পেল উন্নত মানের বীজ কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে ভুটানের রাজা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে আত্মমর্যাদাশীল একটি জাতি : স্পিকার ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়

টাঙ্গাইলে আবাদ হচ্ছে মহৌষধ ননী ফলের

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২২  

টাঙ্গাইলে বাণিজ্যিকভাবে আবাদ শুরু হয়েছে ননী ফল গাছের। নানা রোগের প্রতিরোধক এই ফল গাছ চাষ করে প্রশংসা পাচ্ছেন বাবুল হোসেন নামের ইউনানি হাকিম। বাবুলের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় হলেও ১৭ বছর ধরে তিনি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় বসবাস করছেন।

তিনি ২০০৬ সালে বগুড়ার হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ থেকে ১ বছরের একটি কোর্স করেন। পরে কালিহাতীর এলেঙ্গায় এসে আয়ুর্বেদিক হাকিম হিসেবে ইউনানী ওষুধের দোকান দেন। এই পেশায় থাকায় এই ওষুধি বাগান করার আগ্রহ করেন। ৫ লাখ টাকা খরচ করে বাগান করেছেন তিনি।

এ বছর তার বাগানে ঠিক মত ফল আসলে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকায় ফল বিক্রির আশা করছেন। গাছ ছোট থাকায় এখন ফল কম আসলেও আগামীতে এক গাছেই ৭-৮ কেজি ফল আসবে- এমনই প্রত্যাশা তার। জানা যায়, ‘ননী ফলের’ বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘মরিন্ডাসিট্রিফলিয়া’। এটি একটি আফ্রিকান ফল। এছাড়াও এই গাছটি ক্রান্তীয় অঞ্চলে অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশে জন্মায়।

বাবুল হোসেন কালিহাতী উপজেলার পৌলী এলাকায় এই গাছ রোপণ করেছেন। তার রোপণকৃত গাছের মধ্যে এ বছর ৭০টি গাছে ফল ধরেছে। এই ননী ফল গাছে বারো মাস ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে এ ফল বাজারে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কেজি বিক্রি হয়ে থাকে। এর চারাও বিক্রি হয় ৪শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। ননী গাছের ফল ও পাতা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির এক মহৌষধ। যদিও এখন পর্যন্ত অনেকের কাছেই এই ফলটি অপরিচিত। তবে বর্তমানে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধ নির্মাণকারী সংস্থা ‘ননী ফলের’ জুস বোতল ভর্তি করে বাজারজাত করছেন।


ননী ফল হাড়ের সমস্যায়, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায়, শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের ক্লান্তি কমাতে, স্ক্যাল্পের যেকোনো ইরিটেশন যেমন- চুলকানি, ফুসকুড়ি, এমনকি খুশকির মত সমস্যা, ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায়, বডি ইমিউনিটি বাড়াতে, মানসিক স্ট্রেস কমাতে, সর্দি, কাশি, জ্বর সমস্যায়, স্কিনের ময়েশ্চারকে ঠিক রাখতে ও স্কিনের বয়সকে ধরে রাখতে কাজ করে থাকে। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলি এলাকায় ২ বছর আগে ১ বিঘা জায়গা নিয়ে সিলেট থেকে ৭০টি চারা কিনে বাগান তৈরি করেন বাবুল হোসেন। এর পর মালেয়শিয়া ও আফ্রিকা থেকে বীজ এনে করেছেন প্রায় ৪ হাজার চারা।

তিনি তার পুরো জায়গা টিন দিয়ে বেড়া তৈরি করেছেন। তার প্রস্তুতকৃত জায়গার একপাশে ননী গাছের নার্সারি তৈরি করেছেন। বাকি অংশে ৬ ফুট দুরত্ব রেখে গাছ রোপণ করেছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে তার কাছে ৩০০টি গাছ আছে। অনেকেই কৌতুহল নিয়ে তার এই ঔষুধি বাগান দেখতে আসে। দেখতে এসে গাছের চারা ও ফল কিনে নিয়ে যায়। অনেকে বাড়ির ছাদ ও বারান্দার টবে লাগানোর প্রক্রিয়া করছেন। বাগান দেখতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি এই ফলের নাম আগে কখনো শুনিনি। নেট জগত থেকে জানতে পারি এই ফল ও গাছের পাতা গ্যাস্টিক ও চর্ম রোগের কাজ করে। তাই আগ্রহ নিয়ে বাবুল হোসেনের বাগান দেখতে এসেছি। যাওয়ার সময় একটা গাছ ও কিছু ফল কিনে নিয়ে যাবো। মীর আসাদুজ্জামান বলেন, আমি পাশের এলাকা থেকে এসেছি। আমি এই ফল সম্পর্কে শুনেছি, তাই দেখতে আসলাম।

টাঙ্গাইলের অন্য কোথায় এই ফল গাছের খোঁজ পাইনি। এই ফল এলার্জি ও হাড়ের জয়েন্টের ব্যাথায় খুব উপকারী। তাই ওনার বাগানে এসেছি ননী ফল নিয়ে যেতে। খেয়ে যদি উপকার পাই তাহলে আবার আসবো। ননী গাছ আবাদকারী বাবুল হোসেন বলেন, আমি এই ইউনানী পেশায় থাকার কারণে আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো একটি ভেষজ বাগান করার। সেই কারণে আমি সিলেট থেকে ৭০টি ননী ফলের চারা কিনে আনি। এরপর মালেয়শিয়া ও আফ্রিকা থেকে বীজ আনি। সেখান থেকেই আমার বাগান এ পর্যন্ত এনেছি। এই ফল সম্পর্কে মানুষ খুব একটা জানে না। তাই টাঙ্গাইলে তেমন বিক্রি হয় না। লোকমুখে শুনে কিছু লোকজন আসে।

এই ফলের অনেক গুণ থাকায় এই এলাকাসহ আশেপাশের এলাকা থেকে অনেকেই দেখতে আসে আমার বাগান। আমি মনে করি এই ফলের গুণাগুন সম্পর্কে মানুষ জানতে পারলে প্রচুর চাহিদা বাড়বে। আমার বাগানে ননীফল ছাড়াও ব্ল্যাক জিংজার (কালো আদা), জাবালেম জিংসিং, ইনসুলিং প্লান্ট, তালমুল অশগন্ধা, সর্পবন্ধা, গেতুকুমারী, অর্থ শিপন, চুইঝাল, হস্তিকর্স পলাশ, দাদমর্দন, তুলশি ও পাথরকুচির চারা রয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহ্সানুল বাসার বলেন, বাবুল হোসেন নামের এক কৃষক আমাদের একজন ভালো উদ্যোক্তা। তার আবাদকৃত ননী ফল গাছে এবার ফল ধরেছে। এই ফল বিভিন্ন রোগের ঔষুধ হিসেবে কাজ করে। এই ফল খাওয়ার পদ্ধতি খুব সহজ। মানুষের মধ্যে অনেক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারাও এগুলো কালেকশন করে খাচ্ছে। আর গুণাগুণের দিক থেকে আমরা জানতে পেরেছি এই ফল ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। পুরাতন বাতের ব্যাথা সারাতে এই গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল