• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে তাঁতে তৈরী হচ্ছে শাল চাদর

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০২২  

টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির সুনাম রয়েছে সারা বিশ্বে। সেই তাঁতে এখন তৈরী হচ্ছে উন্নত মানের শাল চাদর। তাঁতে তৈরী বাহারী ডিজাইন আর নিপুন কারুর্কায্যে আর্কষণীয় শীতের পোষাক শাল চাদর প্রায় সব বয়সের নারী-পুরুষের পছন্দ। টাঙ্গাইলের কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শাল চাদর তৈরী হলেও দেলদুয়ার উপজেলার আবাদপুর ও এলাসিন গ্রামে সবচেয়ে বেশি এ চাদর তৈরি হয়। সারা বছরের তুলনায় শীত মৌসুমে ক্রেতাদের মাঝে চাহিদা বেশী থাকায় দ্বিগুন পরিশ্রম করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। এসব তাঁতে দু’সুতি, পাইর, কিরকিরি, নয়নতারা ও বহুরুপীসহ নানা ডিজাইনের শাল চাদর তৈরি হচ্ছে। তাঁতে তৈরী এসব শাল চাদর শীতের শুরুতেই পৌছে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শোরুমগুলোতে।

জানা যায়, শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। হিমেল ঠান্ডা বাতাসে শরীর গরম রাখতে সব বয়সী মানুষের প্রয়োজন শীতের পোশাক। শীতে সব বয়সী নারী-পুরুষের মনে স্থান করে নিয়েছে টাঙ্গাইলে তাঁতে তৈরী শাল চাদর। এ অঞ্চলের শাল চাদরের বৈশিষ্ট্য হল বাহারি রঙের সুতা দিয়ে হাত ও তাঁতকলে আর্কষণীয় ডিজাইনের কারুকার্যে তৈরি করা হয়। দুই/আড়াই হাত প্রস্ত এবং চার/পাঁচ হাত দৈর্ঘে তৈরি হয় শাল চাদর। বর্তমানে ফ্যাশান উপযোগী করে এ শাল চাদর তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান কারিগররা। জেলার বাসাইল, কালিহাতী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন তাঁতপল্লীতেও বর্তশানে শাল চাদর তৈরি হয়। এ অঞ্চলের সহ¯্রাধিক পরিবার শাল চাদর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।


এই এলাকাগুলোতে দুই পদ্ধতিতে শাল তৈরি হয়। মহাজনি পদ্ধতি ও নিজ উদ্যোগে। মহাজনি পদ্ধতিতে মহাজন সুতাসহ খরচ দেবেন, আর তাঁতি নিজের তাঁতে শাল তৈরি করে মহাজনের কাছে পৌঁছে দেবেন। প্রতিটি শালের জন্য মহাজন তাঁকে নির্ধারিত মজুরি দেবেন। আর নিজস্ব উদ্যোগে সব খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়। শাল বিক্রির জন্য নিজেকেই হাঁটে নিয়ে যেতে হয়। মহাজনদের মাধ্যমেই বেশি শাল তৈরি হয় বলে জানান সেখানকার কারিগররা।

এ অঞ্চলে শাল তৈরি করার পর তা বেশির ভাগ বিক্রি হয় করটিয়া হাটে। করটিয়া থেকে পাইকাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, সিলেট, খুলনা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তবে কেউ বান্ডিল (এক বান্ডিলে ছয়টি শাল) কিনতে চাইলে বিক্রি করা হয়। বান্ডিল ভেঙে বিক্রি হয় না। পাইকারিভাবে ২০ থেকে ৫০ টাকা লাভে বিক্রি করা হয়।
তাঁত মালিকরা জানায়, সারা বছর শাড়ী তৈরী করলেও শীত মৌসুমের শুরু থেকে মধ্য শীত পর্যন্ত তারা বেশী পরিমানে শাল চাদর তৈরী করেন। সুতাসহ অন্যান্য উপকরনের মূল্য বৃদ্ধির কারনে তাদের শাল চাদর তৈরীর প্রধান প্রতিবন্ধকতা। অনেকে তাঁত বিক্রী করে বিদেশ চলে গেছে, অনেকে অল্প পুজি নিয়ে শাল চাদর তৈরী করছেন। এ অঞ্চলে তৈরী শাল চাদর ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে গেছে বিক্রীর জন্য।
তাঁত শ্রমিকরা জানান, একজন শ্রমিক দিনে হাতে ৮ টা তাঁত বোনাতে পারে আর হ্যান্ডলোম মেশিনে ১২ থেকে ১৫ টা শাল চাদর তৈরী করেন। এতে যা মুজুরী পান তাতে কোন রকমে তাদের সংসার চলে।


টাঙ্গাইল তাঁত বোর্ডের লিয়াজো কর্মকর্তা মো: রবিউল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় তাঁতীরা হাতে ও তাঁতের মাধ্যমে শীতের পোশাক শাল চাদর তৈরি করছে। এই শাল চাদর গুলো অনেক ভালো মানের এবং সাশ্রীয়। বিভিন্ন সময়ে তাঁতীদের সুবিধার্থে জেলা তাঁত বোর্ডের পক্ষ থেকে বিনা জামানতে তাদের ঋণ দেওয়া হয়। যা তাদের অনেক উপকারে আসে। আর তাঁতে তৈরী বাহারী ডিজাইন আর নিপুন কারুর্কায্যে আর্কষণীয় শীতের পোষাক শাল চাদর শিল্পটির সম্প্রসারনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে জেলা তাঁত বোর্ড।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল