• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

পুরোনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করা ইসমাইলের নেশা

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর ২০২২  

গুণীজনদের অটোগ্রাফ, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহের নেশা টাঙ্গাইলের ইসমাইল হোসেন ওরফে সেলিমের। ছোটবেলা থেকেই তিনি এসব সংগ্রহ শুরু করেছেন। প্রায় ৭০ ছুঁই ছুঁই বয়সে এসেও তিনি সংগ্রহ করছেন এসব। সংগৃহীত জিনিসগুলো দিয়ে তিনি গড়ে তুলতে চান একটি সংগ্রহশালা। সেখানে এসে নতুন প্রজন্ম পরিচিত হতে পারবে পুরোনো ঐতিহ্যের সঙ্গে। 

টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় ইসমাইল হোসেনের জন্ম। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় ডাকটিকিট সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁদের স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসেন শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ। তাঁর অটোগ্রাফ সংগ্রহের মধ্য দিয়ে গুণীজনদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সংগ্রহ শুরু করেন পুরোনো গ্রামোফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ল্যান্ডফোন, বিভিন্ন দেশের মুদ্রাসহ নানা কিছু।

ইসমাইল লেখাপড়া শেষে টাঙ্গাইল পৌরসভায় চাকরিজীবন শুরু করেন। এই পৌরসভার সচিব হিসেবে ২০১৩ সালে অবসর নেন। ছাত্রজীবনের নেশা কর্মজীবনেও ছিল তাঁর। যখন যা পেরেছেন, তা সংগ্রহ করেছেন। তাঁর সংগ্রহে আছে ১৬৪ দেশের কাগজের নোট, পুরোনো দিনের গ্রামোফোন, দৈনন্দিন ব্যবহারের বিভিন্ন জিনিস। রয়েছে ৪২ ভাষায় অনূদিত কোরআন শরিফ। রয়েছে ১৯৩০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তৈরি হওয়া অর্ধশত ল্যান্ডফোন সেট, যার অধিকাংশই এখনো সচল।

এসব তিনি সংগ্রহ করেছেন দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে। প্রখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে মাদার তেরেসা, নেলসন ম্যান্ডেলা, রোনাল্ড রিগ্যান, কফি আনান, বুট্রোস ঘালিসহ বিভিন্ন ব্যক্তির অটোগ্রাফ রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। অটোগ্রাফগুলো তিনি সংগ্রহ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে। তবে মাদার তেরেসার অটোগ্রাফটি সংগ্রহের জন্য ১৯৯৩ সালে তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন।

তাঁর সংগ্রহে রয়েছে ১৯৪০ সালে ইংল্যান্ডের তৈরি ৮ এমএম সাইলেন্ট ফিল্ম প্রজেক্টর। এটি তিনি এক আত্মীয়র মাধ্যমে লন্ডন থেকে সংগ্রহ করেছেন।

গত সোমবার তাঁর কলেজপাড়ার বাসভবনে সরেজমিনে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের ওপর একটি কক্ষে রয়েছে তাঁর সংগৃহীত সব সামগ্রী। গ্রামোফোনে গান বাজিয়ে শোনান। দেখান বিভিন্ন ধরনের টেলিফোন।

এর মধ্যে রয়েছে মেরিন টেলিফোন, মাইন্ড টেলিফোন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেলিফোনসহ নানা টেলিফোন। শতাধিক বছরের পুরোনো হ্যাজাক, হুক্কা, বিভিন্ন তৈজসপত্র, পুরোনো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রেডিও, টেলিভিশন।

ইসমাইল জানান, যেখানে পুরোনো জিনিসপত্রের খোঁজ পান, সেখানে গিয়েই তিনি এগুলো সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই যা কিছু সংগ্রহ করেছি, এসব কিছু দিয়ে একটি সংগ্রহশালা গড়তে চাই। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কেউ এগিয়ে এলে আমি সংগৃহীত সব সেখানে দিয়ে দেব। নতুন প্রজন্ম এগুলো দেখে ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে।’

ইসমাইলের স্ত্রী জাহানারা বেগম জানান, পুরোনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করা ইসমাইলের নেশা। এর জন্য তিনি অনেক টাকাপয়সা ব্যয় করেছেন। এগুলো দিয়ে তিনি একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন।

সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা জানান, ইসমাইল দুর্লভ সব জিনিস সংগ্রহ করেছেন। এগুলো দিয়ে একটি সংগ্রহশালা করা গেলে অনেক ভালো হতো। নতুন প্রজন্ম পরিচিত হতে পারত পুরোনো দিনের সঙ্গে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

ইসমাইল বলেন, ‘আমি পুরোনো বিভিন্ন কিছু সংগ্রহ করেছি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একটি সংগ্রহশালা করলে আমি এগুলো সেখানে দিয়ে দেব।’

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল