• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

গোপালপুরে সেই শহীদ পরিবারের ৫ ভিখারি পাচ্ছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২২  

একাত্তরের ৩০ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার শহিদ পরিবারের জীবিত পাঁচ বিধবারা পাচ্ছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও প্রচলিত সকল সুযোগসুবিধা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত তত্বাবধানে এসব ভিখারী ও দীনহীন বিধবাদের দুঃখের কাল অবসান হতে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর প্রথম দফায় ভিখারী ইফাতন বেওয়া, সমলা বেওয়া (যুদ্ধাহত), সালেহা বেওয়া, রাবেয়া বেওয়া ও হামিদা বেওয়াকে রাস্ট্রীয় সুযোগসুবিধা দেয়ার কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে জানানো হয়।

গত সোমবার এ পাঁচ বিধবার চূড়ান্ত তালিকা জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়।
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ মল্লিক জানান, একাত্তরের ওই দিন মাহমুদপুর গ্রামে গণহত্যার ঘটনা ঘটে।

এতে ১৭জন শহীদ হন। বহু বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। ধর্ষিতা হয় বহু নারী। স্থানীয় প্রশাসন গত অক্টোবর গণ হত্যায় শহিদদের স্মরণে “স্বাধীনতা ৭১” নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। শিলালিপিত সকল শহিদের নাম উৎকীর্ণ করা হয়।

এর অনেক আগে ৭২ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শহিদ পরিবারের সদস্যদের নিকট পাঠানো এক পত্র গণহত্যার শিকার সকলক শহীদের মর্যাদা দেন। তিনি শহিদ পরিবারের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবীল থেকে মহকুমা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রত্যককে ২ হাজার টাকা অনুদান দেন।

কিন্তু পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সব কিছু ছাঁইচাপা পড়ে যায়। শহীদ রমযানের স্ত্রী ইফাতন বেওয়া ভিক্ষা বৃত্তি অবলম্বন করেন। বিধবা ও যুদ্ধাহত সমলা বেওয়া অন্যের বাড়ি অটুলী থাকা শুরু করেন। সালেহা, রাবেয়া ও হামিদা বেওয়ারা ছোট

ছোট অনাথ সন্তানাদি নিয়ে দিনমজুরী বা অন্যের বাড়িতে কাজ করে অতিকষ্টে জীবন চালাতে থাকেন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও ভিখারী ইফাতন বেওয়া বঙ্গবন্ধুর সেই চিঠি বুকে আগলে রাখেন। এ চিঠির প্রসঙ্গ নিয়ে গত ৬ জানুয়ারি একটি দৈনিকে পাঁচদশক ধরে বঙ্গবন্ধুর চিঠি সংরক্ষণ করছেন অসহায় ইফাতন বেওয়া’ নিয়ে খবর ছাপা হলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে পড়ে।

তিনি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে বিষয়টি দ্রুত খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক গত ১০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা উপহার ও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ইফাতন বেওয়ার বাড়ি যান। সকল শহিদ পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা উপহার পৌঁছে দেন।

গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাহমুদপুর গণহত্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শহিদ পরিবারের সদস্যদের ভিক্ষা করে খাওয়ার খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, শহিদ বা গণহত্যার শিকার পরিবার ভিক্ষা করে খাব এটি খুবই লজ্জার, বিশেষ করে আমার জন্য খুবই লজ্জাজনক।

যাদের অবদানে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, যারা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে রক্ত দিয়েছেন, তারা যেন অসহায় বা দুর্ভাগ না পোহায় সেটি সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আমরা যখন ক্ষমতায় আছি, তখন আমি আর দেখতে চাইনা যে, কোন শহিদ পরিবার, জাতির পিতার চিঠি যার হাতে, সে ভিক্ষা করে খাবে, এটা যেন আর না হয়।”

জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি জানান, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে শহিদ পরিবারের পাঁচজন বিধবাকে বাছাই করা হয়েছে। অবশিষ্ট শহিদ পরিবারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়তো পরে পাওয়া যাবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল