• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

সখীপুরে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধনে নারী

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  

চারিদিকে ছায়াবীথি, সবুজের সমারোহ, গাছে-গাছে কোকিল, শালিক, টিয়া, ময়না ইত্যাদি নানা বৈচিত্র্যময় পাখির কলকাকলি আর নৃত্য, যেদিকে তাকাই শুধু সবুজ প্রকৃতি। সবুজে ঘেরা এ সড়কেই দা, কোদাল ও লাঠি হাতে একদল নারী সড়ক পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন। নারীরা বাড়িতে যেমনি ঘর-দুয়ার পরিষ্কার করেন, সৌন্দর্যবর্ধন করেন সড়কের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। টাঙ্গাইলের সখীপুরে গ্রামীণ সড়ক মেরামত, সৌন্দর্যবর্ধন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন নারীরা।

প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্রামীন সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনসহ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন নারীর একটি দল সপ্তাহের ৬দিন এসব কাজ করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে এলজিইডির আওতাভুক্ত বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে।

নারীরা যে কেবল ঘরের ভেতর নয় বাইরেও পুরুষের মতো সকল কাজে সমান পারদর্শী সে প্রমাণটাই রেখে চলেছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ১২০ জন সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ নারীকর্মী।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, সাধারণত নারীকর্মীরা ছোটখাট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে। কার্পেটিং এর উপর ঘাস জমে থাকলে সেগুলো তুলে ফেলা, সড়কের পাশে গর্তে পানি জমে থাকলে নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন করে দেওয়া, সেই গর্তগুলো ভরাট করা, সড়কের শোল্ডারে মাটি সরে গেলে সেখানে মাটি দিয়ে মেরামত করা, সড়কের পাশের ঝোপঝাড় কেটে দেয়া ইত্যাদি তাদের কাজ।

উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের নারীকর্মী লাইলী বেগম, বিউটি আক্তার ও কালিয়া ইউনিয়নের নারীকর্মী মলি আক্তার ও হাছনা বেগম বলেন, মাসিক ৭ হাজার ৫’শ টাকা বেতনে এই চাকুরি করি। এর মাঝে মাসে ২৪০০ টাকা ব্যাংক একাউন্টে সঞ্চয় হিসাবে জমা করতে হয়। এই কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালোভাবেই জীবনযাপন করছি। সন্তানকে লেখাপড়া করাতে পারছি।

তারা ‘পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচী-৩ (আরইআরএমপি-৩) এ কাজ করে। এ কর্মসূচির মেয়াদ ৪ বছর। অন্যদিকে উপজেলার ৪টি সড়কে লেবার কন্টাক্টিং সোসাইটি (এলসিএস) অর্থাৎ চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল কর্মসূচির আওতায় ৪ জন সুপাভাইজার (পুরুষ) ও ৪০ জন নারী কর্মী কাজ করছেন। তারা মাসিক ৯ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। তারাও মাসিক ৩০০০ হাজার টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা করেন। তাদের কর্মসূচি মেয়াদ ৩ বছর।

স্থানীয় লোকজন জানান, যেসব মহিলারা সড়কে কাজ করছে তারা সকলেই দুঃস্থ অথবা স্বামী পরিত্যাক্তা। মহিলা কর্মীদের এসব রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োগ প্রদানের ফলে একদিকে যেমন বেকারত্বের অবসান হচ্ছে তেমনি সড়কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে স্থানীয় জনগণ উপকৃত হচ্ছে।

সড়কে চলাচলকারী অটোরিক্সা চালক ও কচুয়া গ্রামের মজনু মিয়া বলেন, এসব নারীরা বিগত কয়েক বছর ধরে সড়কে কাজ করছে। সড়কে অথবা সড়কের পাশে এখন আর ঘাস হয়না, ঝোপ-ঝাড় থাকে না, পানি জমি থাকে না, গর্ত থাকে না। ফলে সড়কের চলাচলে নিরাপত্তা বেড়েছে। যানবাহন ও পথচারী চলাচলে ঝুঁকি কমে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে গেছে।

এলজিইডি সূত্র জানায়, চলমান প্রকল্প উপজেলা প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৗশলী লকডাউনের মধ্যেও সকল কাজ-কর্ম মনিটরিং করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে প্রকল্পের কাজে গতি ফিরেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সখীপুর উপজেলা প্রকৌশলী এসএম হাসান ইবনে মিজান এ প্রসঙ্গে বলেন, এলজিইডির‘পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচী-৩ (আরইআরএমপি-৩)’ এর আওতায় গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ যেমন পাকা সড়কের শোল্ডার, সড়কের স্লোপ, রেইনকাট মেরামত, বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের ফলে সৃষ্ট খাদ ভরাট, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, ঝোপঝাড় পরিষ্কার, ছোট ছোট ব্রিজ/কালভার্টের এপ্রোচ মেরামত ও সড়ক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।

সাধারণত বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা এবং নারী পরিবার প্রধান হতদরিদ্র ও দুঃস্থ মহিলারা যারা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনে সক্ষম তারা এ কর্মসূচীর মাধ্যমে কাজ করেন। আরইআরএমপি-৩ কর্মসূচিতে সখীপুর উপজেলায় প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জন করে মোট ৮০ জন কর্মী এসব কাজে নিয়োজিত আছেন। এছাড়াও উপজেলার ৪টি সড়কে লেবার কন্টাক্টিং সোসাইটি (এলসিএস) অর্থাৎ চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল কর্মসূচির আওতায় ৪ জন সুপাভাইজার (পুরুষ) ও ৪০ জন নারী কর্মী কাজ করছেন। মজুরী ছাড়াও এদেরকে স্বাবলম্বী করতে হাস-মুরগী পালন, গরু-ছাগল পালন, মাছ চাষ, ঘরের আঙিনায় সবজী চাষ প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এলজিইডির মাধ্যমে অল্প টাকায় ঘরের পাশেই কিছু করার জন্য মাসিক মজুরি থেকে জমা সঞ্চয় প্রকল্পের মেয়াদ শেষে একবারে উত্তোলন করা যাবে। উক্ত টাকা একত্রে পেয়ে এসব প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে নিজের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য স্থায়ীভাবে আয়ের একটা ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এদিকে, উপজেলা প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌলশী, সুপারভাইজার ও সিও’র সমন্বয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলা হয়েছে। এতে প্রতিদিনের কাজের বিবরণ ভার্চুয়ালিভাবে মনিটরিং করা হয়। কোনো শ্রমিক কাজের ফাঁকি দিতে পারে না; গ্রুপটি খোলাতে দারুণভাবে প্রকল্পের কাজের গতি বেড়েছে এবং দ্রুত সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডি টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এলজিইডি দুঃস্থ মানুষের ভাগ্যে উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মহামারীর সঙ্কটকালে দুঃস্থ নারীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক আরইআরএমপি-৩ ও কন্টাক্টিং সোসাইটি (এলসিএস) প্রকল্পটি একটা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল