• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল
সর্বশেষ:
আমাদের সকল প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে গেছে মুজিব নগর সরকার অস্ট্রেড কমিশনার মনিকা কেনেডিকে ইউসিবি বাংলাদেশের অভ্যর্থনা ইসলামপুরে হিট স্ট্রোকে ব্যবসায়ীর মৃত্যু হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে যে নির্দেশনাগুলো দিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠন: প্রধানমন্ত্রী এক্সারসাইজ টাইগার লাইটনিং (টিএল)-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরে সই হবে ৫ চুক্তি ও সমঝোতা বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের তাগিদ আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি: শেখ হাসিনা যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব বাঁচত

ঘাটাইলের শাহপুর গ্রামের প্রায় শতভাগ মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায়

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২১  

"দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ" স্লোগানটির বাস্তব প্রয়োগ ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামে। কোভিডের এই দুঃসময়ে গ্রামের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল বসে না থেকে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে লোকজনকে ভ্যাকসিন গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছে।অনুপ্রাণিত করেই থেমে থাকেনি গ্রুপটি। সাথে নিজেদের খরচে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করে টিকা কার্ড প্রিন্টও করে দিয়েছে তরুণ শিক্ষার্থীরা।

ইতোমধ্যে উপজেলার শাহপুর গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন গ্রহণ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অনেকেই দুইটি ডোজই গ্রহণ করেছে। গ্রামের তরুণ শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় অসাধ্য এই কাজটি সম্পন্ন হয়েছে বলে এলাকবাসী বলছেন।

জানা যায়, উপজেলার শাহপুর এলাকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে লোকজনকে ভ্যাকসিন গ্রহণের সুফল বুঝিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করে সেই নিবন্ধন কার্ড প্রিন্ট করে তাদের টিকাকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। তরুণদের এই গ্রুপটিকে নেতৃত্ব ও আর্থিক সহায়তায় ছিলেন তরুণ ব্যবসায়ী মোঃ আমিনুল ইসলাম রুবেল ও তরুণ শিক্ষক মোঃ খালিদ হাসান খোকন।

এই বিষয়ে কথা হয় তরুণ শিক্ষক খালিদ হাসান খোকনের। তিনি জানান, মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই কাজটি হাতে নেই আমরা। গ্রামের সহজ-সরল মানুষরা ভ্যাকসিন সম্পর্কে অনেক উদাসীন এবং তাদের মাঝে এটি গ্রহণ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা আছে। সেই চিন্তা থেকেই রুবেল প্রথমে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সাথে সচেতনতা ও নিবন্ধন কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে কথা বলেন। সেই আলোকে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নিরলস পরিশ্রমে গ্রামের প্রায় পাঁচশত নারী-পুরুষকে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করে দেওয়া হয়। সেই সাথে টিকার কার্ড প্রিন্ট করে সেই কার্ড বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌছে দেয় টিমটির সদস্যরা।

গ্রামে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকের মাঝে যে ভ্রান্ত ধারণা ছিলো তা অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে এবং লোকজন নিজ ইচ্ছায় ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করছে বলে তিনি জানান।

তাদের কাজটি কতটা কঠিন ছিলো- এমন জিজ্ঞাসায় শিক্ষক খোকন বলেন, ছেলেদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রায় তিন কিলোমিটারের গ্রামটিতে অনেকগুলো পাড়া এবং প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস। আমরা সেচ্ছাসেবকদের কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে দেই। গ্রুপের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করে টিকা কার্ড প্রিন্ট করে পৌছে দেয় এবং নিবন্ধনধারীদের টিকা কেন্দ্রে গিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে। ইতোমধ্যে টিকা গ্রহণ শুরু হয়েছে। আমাদের এই কাজ শতভাগ শেষ হওয়া না পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য প্রাপ্যতার ভিত্তিতে শতভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা।

এই কার্যক্রমে রুবেল, আওয়াল কাজী, সুমন, ফরহাদ, শান্ত, জিহাদ, রাব্বি, প্রান্তিক, রিমন প্রমুখ বিভিন্ন গ্রুপের দায়িত্ব পালন করে।
আর্থিক সহায়তা সম্পর্কে খোকন জানান, "তরুণ ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রুবেল আর্থিক সহায়তা করেছে এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছে।"

মোঃ আমিনুল ইসলাম রুবেল বলেন, আমরা আনন্দের সাথে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এখানে সামাজিক দায়বদ্ধতা যেমন ছিল, তেমনই এই কাজ করে আমরা করে দেখিয়েছি যে তরুণরা ইচ্ছে করলেই গ্রাম বা সমাজের অনেক ভালো কাজ সম্পন্ন করতে পারে। আমরা চাই আমাদের দেখে অন্যান্য গ্রামের তরুণরা সমাজের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করুক।

জানা যায়, এর আগেও প্রায় শতাধিক পরিবারকে নিজেদের টাকায় উপহার সামগ্রী দিয়েছিলো গ্রামের তরুণরা। তরুণদের এমন কর্মকাণ্ডকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন গ্রামের সচেতন মহল।

করোনাভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন সম্পন্নকারী শাহপুর গ্রামের আসলাম মিয়া বলেন, ভ্রান্ত ধারনায় শুরুতে করোনার টিকা গ্রহণে আমার আগ্রহ ছিল না। পরে এলাকার ছেলেরা আমার সেই ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছে এবং তাদের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমি নিবন্ধন সম্পন্ন করেছি। এখনও টিকা নেয়ার তারিখ পাইনি। আমি এই কর্ম সম্পাদনকারীদের সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।

শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম মিয়া বলেন, "নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয় কাজ। আমাদের গ্রামের ছেলেরা প্রায় অসম্ভব কাজটি সম্ভব করে দেখিয়েছে। গ্রামের মানুষদের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা আছে, ছেলেরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সেই ভুল ধারণা পাল্টে দিয়েছে এবং ভ্যাকসিন গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছে।"

স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন লেবু বলেন, গ্রামের ছেলেদের এই কাজটা একটা বিরল উদাহরণ। এটাই সম্ভবত বাংলাদেশে প্রথম। আমি ছেলেদের ধন্যবাদ জানাই এবং এমন কাজে আমি সবসময় তাদের পাশে থাকব।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল