• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ধনবাড়ীর এক গ্রামে ৫ শত কৃষকের সবজি চাষে সাফল্য

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২১  

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে প্রথমবারের মতো পরিবেশসম্মত বিষমুক্ত সবজি চাষ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আইপিএম প্রকল্পের আওতায় মডেল প্রকল্প হিসেবে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় এ মডেল ইউনিয়নে সবজি চাষে রয়েছে ২০টি দল। প্রতিটি দলে পাঁচজন নারীসহ ২৫ জন করে রয়েছে সদস্য। ২০টি দলে মোট ৫০০ জন কৃষক রয়েছেন।

কৃষকরা জানান, এক সময় তারা ধান ও সবজি চাষে রাসায়নিক সার ও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করতো। ফলে ফসল চাষে খরচ বেশি হতো। এসব ফসলে বিষ প্রয়োগ ক্ষতিকর জেনেও তারা দিন দিন ফসল চাষ চালিয়ে যাচ্ছিল। সম্প্রতি রবি মৌসুমের আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সারা দেশে ১০টি মডেল ইউনিয়নে আইপিএম প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নকে গ্রহণ করে।

জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাইদমন, ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ফেরোমন ফাঁদ স্টিকিটাপ বা হলুদ আঠালো ফাঁদ, পরিবেশ বান্ধব জৈব বালাইনাশক পদ্ধতিতে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পে সুযোগ পেয়ে ৫০০ জন নারী পুরুষ কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়ে বিষমুক্ত সবজি চাষে সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিষমুক্ত সবজি ইতোমধ্যে উপজেলা-জেলা ছাড়িয়ে রাজধানী ঢাকায়ও সুনাম কুড়াচ্ছে।


দুটি মৌসুমে প্রশিক্ষিত কৃষকরা রবি মৌসুমে করলা, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, খরিপ মৌসুমে পটল, ধুন্দল, লাউ চাষ করছে। রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত সবজি চাষে সফলতা পেয়ে কৃষকদের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে।


মুশুদ্দি উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক আ. রাজ্জাক (৪৫) জানান, তিনি জৈবিক উপায়ে ৩৫ শতাংশে করলা, ২০ শতাংশে চিচিঙ্গা, ২০ শতাংশে পটল, ২০ শতাংশে চালকুমড়া চাষ করেছেন। ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে এবং রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈবিক উপায় অবলম্বন করেছেন। আগে সবজি চাষে কীটনাশক ও বিষ ব্যবহার করা হতো। কৃষি বিভাগ থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন। এতে তার খরচ অনেকটা কমে এসেছে।

মুশুদ্দি কামারপাড়া গ্রামের সোহরাব আলী (৬৫) জানালেন, ২০ শতাংশ জমিতে করলা, ১০ শতাংশে পটল চাষ করেছেন। তিনি আগে এ চাষ পদ্ধতি জানতেন না। এবার তিনি বিষের পরিবর্তে সেক্স ফেরোমন ও আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করছেন। সারের পরিবর্তে জৈব ও কেঁচো সার ব্যবহার করে ফলন ও দাম ভালো পেয়েছেন।

মুশুদ্দি মধ্যপাড়া গ্রামে মিজানুর রহমান শিবলী (৫৫) ও যোপনা পূর্বপাড়া গ্রামের আকাব্বর আলী জানান, বিষমুক্ত সবজি চাষে তারা খুব খুশি। তবে তাদের জৈবিক উপায়ে বিষমুক্ত সবজির ন্যায্য দাম ও আলাদা বাজার স্থাপনের দাবি জানান।


খন্দকার পাড়ার সোলায়মান ও মুশুদ্দি উত্তরপাড়ার মুহাম্মদ আলী তাদের উৎপাদিত পরিবেশ সম্মত সবজি প্যাকিং করে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করার দাবি জানিয়ে বলেন, ধনবাড়ী এলাকার বিষমুক্ত সবজি চাষীদের জন্য হিমাগার স্থাপন করলে তাদের মানসম্মত সবজি সংরক্ষণ করতে পারবেন। এতে তারা সবজির ন্যায মূল্য পাবেন।


ঝোপনা পূর্বপাড়ার মুকুল ও আয়নাল হক বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় উন্নতজাতের উচ্চ ফলনশীল সবজির বীজ, মাঁচার খুঁটি ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ পেয়ে কৃষিতে আমাদের অভিজ্ঞতার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিষমুক্ত ও জৈবিক উপায়ে সবজি চাষ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি তাদের।


সরেজমিনে দেখা যায়, পটল, চিচিঙ্গা, করলা, কুমড়া খেতে প্লাস্টিকের বোতল ও হলুদ রঙের কার্ড সবজি খেতে উপরে দুলছে। দূর থেকে দেখে মনে হয় রঙিন কাগজ উড়ছে। সারি সারি সবজি বাগান। সবুজের মনজুড়ানো মাঠ দিগন্তে ফুলে ফুলে শোভাশিত। নানা সবজি ধরে আছে খেতে খেতে। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়, এ এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।


এ ব্যাপারে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মেদ বলেন, জৈবিক উপায়ে বিষমুক্ত সবজি চাষে এ প্রকল্পের কৃষকদের হাতে কলমে শেখানো হয়েছে। কেঁচো সার তৈরিসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বীজ, মাঁচা, মাঁচার খুঁটি ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। মাঠে গিয়ে তাদের পরামর্শ দানের মাধ্যমে নতুন কৌশলে সবজি চাষ করানো হয়েছে।


ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সারাদেশে ১০টি ইউনিয়নে মডেল হিসেবে কাজ চলছে। তারমধ্যে ধনবাড়ীর মুশুদ্দি ইউনিয়ন একটি। আমরা নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য থেকে পিছিয়ে আছি। এ চাহিদা পূরণের জন্য এটি একটি উত্তম পন্থা। নিরাপদ খাদ্য মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সারাদেশে বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো বিশেষ প্রয়োজন। ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্ধি ইউনিয়নে ১০০ একরে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি মডেল হিসেবে আবাদ করা হয়েছে। যাতে এটি দেখে অন্যরাও উৎসাহ পায়।


এবিষয়ে কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে মুশুদ্দি ইউনিয়নকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে এবছর ১০০ একরে নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি চাষ করা হয়েছে। এপ্রকল্প আমি পরিদর্শন করেছি। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির আবাদ শুধু মুশুদ্দি নয়, সারাদেশে এর বিস্তার ঘটানোর জন্য বর্তমান সরকার কাজ করছে।


কৃষকদের দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তাদের দাবি-দাওয়াগুলো আমি অবগত আছি। পর্যায়ক্রমে দাবিগুলো পূরণ করা হবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল