• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

ভ্যান চালক পিতার স্বপ্ন ছেলে বড় ডাক্তার হবে

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২১  

আশরাফুল ইসলাম সবুজ। বাবা-মার বড় সন্তান। বাবা পেশায় একজন ভ্যান চালক। সংসারের একমাত্র উপার্জন মাধ্যম তিনিই। কিন্তু তার ইচ্ছা একদিন সে মস্ত বড় হবে। তবে অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর দারিদ্রতার কষাঘাত দমাতে পারেনি সবুজকে। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। চার সদস্যের অভাবী সংসারের মধ্যেই অনেক কিছু না পেয়েও হাল ছাড়েনি সবুজ। তাইতো ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ সিলেট-এ ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

জানা যায়, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের কয়ড়া পূর্বপাড়া গ্রামের ভ্যান চালক আব্দুর রশিদের ছেলে আশরাফুল ইসলাম সবুজ। তারা দুই ভাই। ছোট ভাই সবিজ রায়হান ধনবাড়ী মডেল কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে। মা সুফিয়া বেগম। সবুজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে তার মাও অন্যের বাড়ীতে কাজ করেন। দাদা জোয়াহের আলীও ভ্যান চালক। সম্পদ বলতে ভিটে-বাড়ী টুকুই একমাত্র সম্বল। সবুজ ধনবাড়ী মডেল কলেজিয়েট স্কুল থেকে জেএসসি, এসএসসি এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ময়মনসিংহ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।


এলাকাবাসী জানান, ভ্যান চালক আব্দুর রশিদের দুই ছেলেই খুব মেধাবী। সংসারে একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম ওই রশিদ। এতদিন ভ্যান চালিয়ে ও ধারদেনা করে দুই ছেলেকে পাড়ালেখা করিয়ে আসছে। কিভাবে সবুজকে ডাক্তারি পড়াবে এ নিয়ে সবুজের বাবা খুবই চিন্তিত।

ভ্যান চালক আব্দুর রশিদ বলেন, ছোট বেলা থিকা সবুজ ভালা ছাত্র। হে ছোট বেলা থিকা সবাইরে কইতো আমি ডাক্তার অমু। অনেক কষ্ট কইরা পুলারে লেখাপড়া করাইতাছি। আল্লাহ রহমতে আমার পুলা ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাইছে। কিন্তু আমার সংসারে আয়-উন্নতি নাই। এজন্য অনেক কষ্টের মধ্যে আছি। কিবা কইরা পুলাডারে ডাক্তারি পড়ামু, ডাক্তারি পড়াইতে পারমু কিনা তাও জানি না। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমগর কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক স্যারসহ সমাজের বড় বড় মানুষের কাছে সবুজের জন্য সাহায্য চাই।


 
সবুজের মা সুফিয়া বেগম বলেন, দুই পুলারে অনেক কষ্ট কইরা পড়ালেখা করাইতাছি। অনেক সময় না খাইয়া থাকি। আমগর পুলাডা পড়াশোনা কইরা ডাক্তরি পড়ার সুযোগ পাইছে। এখন পুলাডারে ভর্তির জন্য টেহা কোনুু পামু?

আশরাফুল ইসলাম সবুজ বলেন, নিজস্ব চেষ্টায় অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। স্কুল ও কলেজের স্যাররা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। অনেক সময় টাকার অভাবে বই কিনতে পারিনি। অন্যের বই পড়েছি। মেডিকেলে পড়ার জন্য যে টাকা লাগবে তা আমার পরিবারে পক্ষে বহন করা সম্ভব না। এ জন্য আমি সমাজের বিত্তবানদের নিকট সহযোগিতা কামনা করি।

ধনবাড়ী মডেল কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসএম মাসুদ কবির জানান, সবুজ সব ক্লাসেই ভালো ফলাফল করত। সে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। দরিদ্রতার মাঝে পড়াশোনা চালিয়ে সে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সবুজের পরিবার অসচ্ছল। আমরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওকে পড়ালেখার জন্য সহযোগিতো করেছি। তার সাফল্য কামনা করি। মেডিকেলে ভর্তি সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। ওর পরিবার দরিদ্র হওয়ায় মেডিকেলে পড়াশোনা করার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল