• শুক্রবার ১১ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

  • || ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারকে সহায়তা করুন

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

নৌ-পরিবহন, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দেশের সকলের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
তিনি আজ এক সংলাপে বলেন, আমাদের অবশ্যই নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে। সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা আপনাদেরও (রাজনৈতিক দলগুলোর) দায়িত্ব।
সিজিএস চেয়ারপারসন মুনিরা খানের সভাপতিত্বে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) নগরীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর ‘ডায়লগ ফর ডেমোক্রেটিক রিকনস্ট্রাকশন’ শীর্ষক ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘মানবাধিকার’ বিষয়ক সংলাপের আয়োজন করেন । 
পুলিশ বাহিনী সংস্কারের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সরকারের পুলিশকে মানবিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাসিনা যদি আরও তিন-চার দিন টিকতেন, আপনি আমাকে তার আয়নাঘরে (গোপন কক্ষে) দেখতে পেতেন।’
রাষ্ট্রীয় সংস্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্র্বর্তী সরকারকে সহায়তা করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় সময় চেয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন প্রয়োজন’।
সুশীল সমাজের সদস্যরা অনেক উপদলে বিভক্ত উল্লেখ করে উপদেষ্টা একটি ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার করতে হবে। এখানে আপনাদের উপস্থাপিত প্রতিটি পয়েন্ট আমি নোট করেছি। এগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।
সংলাপে বক্তব্য রাখেন- সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসকে) নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট আলেনা খান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক মো. আশরাফ কায়সার, জি-৯-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, জোরপূর্বক গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম মায়ের ডাক এর আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম টুলী, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব মো. ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ, গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) শিক্ষার্থী নাইমা আক্তার রিতা প্রমুখ। 
বক্তারা মানবাধিকার রক্ষায় মানবাধিকার কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিদ্যমান কমিশন সরকারের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কিছুই নয়।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)-এর চেয়ারম্যান ড. ববি হাজ্জাজ বলেন, যদি আমরা বেসরকারি উদ্যোগে একটি স্বনির্ভর ও স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন স্থাপন করতে পারি, যেখানে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, তবে আমরা একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান পেতে পারি।’ 
ববি বলেন, কিন্তু বাস্তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে তারা সরকারের সমালোচনা করতে পারে না। তাই সম্পূর্ণ স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের প্রয়োজন, যাতে সরকার তার কাজে হস্তক্ষেপ করতে না পারে।
এএসকে নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান বলেন, মানবাধিকার কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়া উচিত। কমিশনের কর্মকর্তাদের তাদের দায়িত্বের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি সরকারের প্রতি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করে আয়নাঘরসহ অন্যান্য গোপন নির্যাতনের স্থানগুলো সংরক্ষণের আহ্বান জানান। ওই নির্যাতন কেন্দ্রগুলোতে মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। 
সিজিএস চেয়ারপারসন মুনিরা খান রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপগুলোকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্রকে এমনভাবে সংস্কার করতে হবে যাতে দেশে কখনো আর ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে।
জিওপির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সংলাপে অন্যান্য বক্তারা ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গণহত্যা, নির্যাতন ও গুমের জন্য দায়ী সকল কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে দেশে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
বক্তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একটি জনবান্ধব বাহিনীতে রূপান্তর করতে পুলিশ কমিশন গঠনের পরামর্শ দেন।