• রোববার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩০

  • || ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৩  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে মন্তব্য করে বলেছেন, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। তাঁর সরকার চায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। দেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই তারা আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বারবার তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন বলেই এই কাজগুলো (দেশের উন্নয়ন) আমরা করতে পেরেছি। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অগ্নিসন্ত্রাসের মতো মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করেও আমরা উন্নয়নের পথে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চাই।

রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত ১৫ তলাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ (বিটিআরসি) ভবন ও ১৩ তলা ‘তথ্য কমিশন ভবন’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একইসঙ্গে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন’ (বিএফডিসি) কমপ্লেক্সেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

বিগত বছরগুলোতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক সরকার চলছে। দেশে একটা স্থিতিশীলতা চলছে, যদিও এর মাঝে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, অগ্নিসন্ত্রাস অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হয়েছে। তার পরও কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে।

২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে আমাদের স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট ইকোনমি হবে, স্মার্ট সোসাইটি হবে, স্মার্ট সরকার হবে। সেটা সামনে নিয়েই আমরা সকল ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন জনগোষ্ঠী, সমাজ এবং সরকার ও দেশকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না, ভূমিহীন মানুষ ঘর পাবে, প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। আমি এইটুকু চাই, আজকের আমাদের দেশটা সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এই মাসেই জাতির পিতাকে হারানোর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতার ভিত্তি তৈরি করে দেওয়া বা শুরু করে যাওয়া প্রতিটি কাজ সফলভাবে করতে পেরে আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসি ভবন, তথ্য কমিশন ভবন এবং বিএফডিসি কমপ্লেক্স (তেজগাঁও) সংযুক্ত ছিল। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে নবনির্মিত বিটিআরসি ও তথ্য কমিশন ভবন এবং বিএফডিসি কমপ্লেক্সের ওপর একটি অডিও-ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

তাঁর সরকারের চালু করা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রসঙ্গ টেনে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে অবসর ভাতা কেবল সরকারি কর্মকর্তারাই পেত, সেটাকে আমরা এখন সর্বজনীন করে দিয়েছি। কেননা, যখন তাদের (অবসরে যাওয়া বেসরকারি কর্মজীবী) কাজ করার সুযোগ থাকবে না তখন তাদের জীবনটা যেন অর্থবহ থাকে এবং প্রত্যেক মানুষের জীবনটা যেন নিরাপদ হয়।

বিএফডিসি কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পাশাপাশি এক একর জমিতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন বিটিআরসি ভবন এবং দশমিক ৩৫ একর জমিতে তথ্য কমিশন ভবন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখনই কোনো উন্নয়নের উদ্যোগ নিই, তখনই দেখতে পাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভিত্তি প্রদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ভিত্তির ওপর নির্ভর করেই আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতার পদচিহ্ন অনুসরণ করে বাংলাদেশ ও এর জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে পেরে তিনি অত্যন্ত আনন্দ বোধ করছেন।

তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তথ্য চাওয়া এবং তথ্য পাওয়াটা মানুষের অধিকার। সেই অধিকারটা নিশ্চিত আমরা করতে পেরেছি এবং এখন মানুষ কোনো তথ্য চাইলে তা পেতে পারে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগের কোনো রাখঢাক (গোপনীয়) কিছু নেই। কোনো তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে সেই চিন্তা আমাদের নেই। আমরা যা করব সম্পূর্ণভাবে জনগণকে জানিয়ে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জনগণের কল্যাণ করাটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ‘তথ্য অধিকার আইন’ পাস করে এবং এর আওতায় ‘তথ্য কমিশন’ গঠন করে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয় এবং কমিশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার বেরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় দেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়, এমন অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাই বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং সংসদ টেলিভিশনের পাশাপাশি ৪৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও, ১৪টি আইপি টিভিসহ অসংখ্য সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টালের অনুমোদন দিয়েছি। আমরা সাংবাদিকদের কল্যাণে ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪সহ বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা টেলিডেনসিটি ১০৪ শতাংশে উন্নীত করেছি। দেশে এখন মোবাইল গ্রাহক সংযোগ ১৮ কোটির ওপরে। ১৯ কোটি মানুষ কিন্তু সিম ব্যবহার হচ্ছে ১৮ কোটির ওপরে। মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৭০ লাখ।

তাঁর সরকার মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, দেশের সকল টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। সাবমেরিন ক্যাবল কক্সবাজারে এবং কুয়াকাটায় সংযুক্ত করা হয়েছে এবং আরও একটি সংযোগের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে বিটিআরসির ব্যান্ডউইথ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) এর পাশাপাশি আরও তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্তির লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার বিস্তৃতি হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৮ কিলোমিটার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমলে ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে দুই দুই বার বিনা খরচে সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে এই অজুহাতে তারা এই সুযোগ প্রত্যাখ্যান করে। তিনি বলেন, ২০১১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভের পাশাপাশি ১২ বছরে বিটিআরসি শুধু তরঙ্গ বরাদ্দ দিয়ে রাজস্ব আয় করেছে ৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তাঁর সরকার ৮ হাজার ৮৪৩টি ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮ হাজার ৫০০টি পোস্ট ই-সেন্টার স্থাপন করেছে। ইউনয়িন পর্যায় পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫ হাজার ২৫৬টি ওয়েবসাইট সংবলিত বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘তথ্য বাতায়ন’ চালু করেছে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৫৬ সালে মন্ত্রী থাকাকালীন জাতির পিতার হাতেই এদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের গোড়া পত্তন হয় উল্লেখ করে জানান, তাঁর মারও এতে ভূমিকা ছিল বলেই অভিমত কন্যা শেখ হাসিনার। সে সময় এদেশে কোলকাতা ভিত্তিক বাংলা ছবির প্রদর্শনী হতো। একটি ছায়াছবি দেখে রিক্সাযোগে ফেরার পথে তাঁর মা (বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব) বাবার কাছে কথা তুলেছিলেন, বাংলাদেশেও কি এমন চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় না? পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদে এক বিল উত্থাপনের মাধ্যমে এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেন, যা ওই বছরের ৩ এপ্রিল পাস হয়। জাতির পিতা গাজীপুরে ফিল্মসিটির জন্য জায়গাও বরাদ্দ দিয়ে গিয়েছিলেন।

স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে এফডিসি নির্মিত ‘কখনো আসেনি’, ‘কাঁচের দেওয়াল’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’র মতো জীবনমুখী চলচ্চিত্রগুলো, জহির রায়হান নির্মিত কালজয়ী চলচিচত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘ওরা ১১ জন’সহ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলো আমাদের দেশেই নির্মিত হয়েছে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্রকে ‘শিল্প’ হিসেবে তাঁর সরকার ঘোষণা দেয়।

‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালে সম্পন্ন হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্পের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পটির ভূমি ব্যবহার করা হচ্ছে। কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ফ্লোরে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে, যাতে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তা প্রদর্শন করার সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ‘চলচ্চিত্র সংসদ নিবন্ধন আইন, ২০১১’, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন-২০১৯’ প্রণয়ন করেছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’। অসচ্ছল শিল্পী ও কলাকুশলীদের আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যে ‘শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়েছে।

পাশাপাশি সিনেমা হল মালিকদের দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি ব্যাংক ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রণীত হয়েছে চলচ্চিত্র নীতিমালা।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল