• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

বাইডেনকে লেখা ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির তথ্য ‘অসত্য ও বিভ্রান্তিকর’

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২৩  

বাইডেনকে লেখা ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বর্তমান অবস্থা বোঝাতে যেই তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তাকে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য বলে জানিয়েছেন দেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের নেতারা। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানাদাশ গুপ্ত, ঢাকার এমিরেটস আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের মহাসচিব ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়সহ দেশের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর নেতারা এই চিঠির তথ্যগুলোকে বিভ্রান্তিকর বলে মত দিয়েছেন।

এই চিঠিতে দাবি করা হয়, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী অর্ধেক হয়ে গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানাদাশ গুপ্তের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর হিন্দুদের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে, এ কথা বললে আমি বলব, এটি সত্য নয়। ১৯৭১ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত হিসাব যদি করতে চাই, ১৯৪৭ সালে যেই সংখ্যালঘু সংখ্যা ছিল ২৯.৭ শতাংশ তা ১৯৭০ সালে কমে দাঁড়ায় ১৯-২০ শতাংশ এবং ২০১১ সালে ১০.১ শতাংশ ঘোষণা করা হয়। এক মাস আগে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে নতুন করে জানানো হয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ৯.১ শতাংশ যেখানে হিন্দুদের সংখ্যা ৮ শতাংশের মতো। এটি এই দীর্ঘ সময়জুড়েই কমেছে। শুধু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর কমে গেছে বললে তা কোনো ফ্যাক্ট হিসেবে টিকবে না। তবে নির্বাচনের সময় এলে একটি শ্রেণি তৎপর হয়ে ওঠে এবং সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি। 


এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকালে চলা লবিংয়ের সঙ্গে এই কংগ্রেসম্যানদের এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশনের মিল পাওয়া যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন এই কংগ্রেসম্যানরা কেন এটা করেছে, তা আমি বলতে পারছি না। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকে এর প্রসিকিউটর হিসেবে ছিলাম আমি। এই ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করার জন্য সেই সময় লবিং করা হয়েছিল। টবি ক্যাডম্যান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে লবিস্ট ফার্ম হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তা করে খুব একটা লাভ হয়নি। এটা তো দেখতেই পাচ্ছেন।

একইভাবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা, অত্যাচার ও নিপীড়ন চলছে।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকার এমিরেটস আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এই দেশে আমরা বসবাস করছি আমরা জানব না! হ্যাঁ, কিছু ঘটনা ঘটেনি, তা বলব না। কিন্তু বর্তমান সরকারের অধীনে আমরা নিরাপদে আছি। আর এটা আমাদের দেশ। এই দেশ ছেড়ে আমরা কোথাও যাব না।’

তিনি এ সময় প্রশ্ন করেন, তারা যেকোনো কিছু লেখার আগে খোঁজ নেবেন না? হ্যাঁ, তারা মানবাধিকার বিষয়টিকে সামনে নিয়েই কাজ করছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা মানবাধিকারের অংশ। এ বিষয়ে তারা পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু আমাদের বিষয়ে এভাবে না জেনে কিছু বলা উচিত নয়।

বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, বাংলাদেশে আমরা যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু রয়েছি এবং জাতিগত সংখ্যালঘু রয়েছি, বর্তমান সময়ে আমরা ভালোই আছি। বলতে গেলে এ সরকার সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার এবং ২০০৮ সালের পর থেকে এযাবৎ আমরা বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের যারা রয়েছেন তারা ভালোভাবেই এ দেশে বসবাস করছে এবং এখানে বিশেষভাবে সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখেছে। এ সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিশেষভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সংখ্যালঘুরা ভালো আছেন।

প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে সংখ্যালঘুদের খোঁজখবর নেন এবং আমরাও প্রায় প্রত্যেক বড়দিনেই তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। উনি ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর আমাদের খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন এবং গত কয়েক বছরে ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গত বড়দিনেও আমাদের ২ কোটি টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা আমরা বিভিন্ন চার্চে বিতরণ করেছি।

তিনি বলেন, আমরা শুনতে পেরেছি যে আমেরিকার কয়েকজন কংগ্রেসম্যান তাদের দেশের প্রেসিডেন্টকে বলেছেন যে, বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু আমি বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে বলতে চাই- ওই কথাগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায় বিশেষ করে এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারা ভালোই আছেন। এই সরকারের যে উন্নয়ন কর্মসূচি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের মহাসচিব ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় বলেন, ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠিটি আমি দেখেছি। এটা সত্য যে, রামুসহ বেশ কিছু এলাকায় আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু এই সরকার আমাদের রামুর বৌদ্ধ বিহার পুনর্নির্মাণ করে দিয়েছে। এর আগের কোনো সরকারের বেলায় তো এমনটা করে দেওয়া হয়নি। সুতরাং আমরা কীভাবে বলি যে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন করছে। বরং হামলা-পরবর্তী সময়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে সরকার। এই সরকার সংখ্যালঘুবান্ধব বলেই মনে করি আমরা।

সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বের পাশাপাশি সাধারণ সদস্যরাও এই চিঠিতে থাকা বিভ্রান্তিকর তথ্যে বিস্মিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক সদস্য জানান, সংখ্যালঘু হিসেবে হামলার শিকার আমরা হইনি সেটা নয়। কিন্তু বর্তমান সরকার আমাদের ওপর হওয়া প্রতিটি হামলার পর নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এই সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে, এটি একেবারেই মিথ্যা তথ্য। এর কোনো ভিত্তি নেই।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে ‘সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন’ এবং ‘তাদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ’-এর দাবি জানিয়ে মার্কিন ছয় কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি, ব্যারি মুর, ওয়ারেন ডেভিডসন, বব গুড, টিম বার্চেট এবং কিথ সেলফ একটি চিঠি দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে। গত ২ জুন বব গুড তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২৫ মে লেখা চিঠিটিসহ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় দেশের গণমাধ্যমে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল