• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করি না

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৩  

কোনো দেশ স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিলে তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কিছু কিনবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখন আবার ওই স্যাংশন দেওয়ার একটা প্রবণতা, যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করি, তাদের ওপর স্যাংশন। আমি বলে দিয়েছি, যে দেশ স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে কিছু কিনব না। আমার কী করবে, বাবা-মা, ভাই-বোন সব মেরে ফেলে দিয়েছে। আমার তো হারাবার কিছু নেই। কিন্তু আমি আমার দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ তিনি বলেন, তার সরকার কখনোই অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে না।
শনিবার রাজধানীর রমনায় আইইবি প্রাঙ্গণে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর ৬০তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সরকার ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আসছে। আমরা ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রেখেছি এবং ঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ঘূর্ণিঝড়ের সময় পানি জমে গেলে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই সে সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এই পদক্ষেপ (গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্ধ) সাময়িক দুর্ভোগ সৃষ্টি করলেও মানুষের জীবন রক্ষা পাবে। আমরা এ ধরনের ব্যবস্থা নেব ও নিচ্ছি।
আইইবির সভাপতি প্রকৌশলী মো. নজরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাত হোসেন (শিবলু)। অনুষ্ঠানে আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোল্লা মো. আব্দুল হোসেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনারারি সেক্রেটারি প্রকৌশলী কাজী খাইরুল বাশার অনুষ্ঠানে যোগদানকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ওপর গানসহ একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলী, কেন্দ্র, উপ-কেন্দ্র, প্রকৌশল বিভাগ ও এএমআরই বিভাগের ¯œœাতকদের হাতে পুরস্কার (স্বর্ণপদক) ও সনদপত্র তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৌশলীদের দেশের উন্নয়নের মূল শক্তি হিসেবে অভিহিত করে তাদের বাংলাদেশের বিদ্যমান উন্নয়নের ধারাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং আপনাদের (প্রকৌশলী) কাছে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করব, আগামীতে এই উন্নয়নের ধারাটা যেন চলমান রাখতে পারি। সেই বিষয়ে সবাই আন্তরিক থাকবেন। সেভাবে আপনারা কাজ করবেন।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে জনগণ হবে স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট উৎপাদন ব্যবস্থা থাকবে। চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে দেশের মানুষ স্মার্ট হবে, সেটাই আমরা চাই। দক্ষ জনগোষ্ঠী আমরা গড়ে তুলতে চাই। কোনো জায়গা থেকে আমরা পিছিয়ে থাকব না।
প্রকৌশলীদের দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে যেখানে কাজ করবেন নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে, দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করতে হবে। কোন প্রকল্প দেশের মানুষের জন্য কতটা দরকার তা বিবেচনা করে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যে প্রকল্প নেই, আগে চিন্তা করি দেশের মানুষ কতটুকু উপকার পাবে। আর সেই প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে রিটার্ন কী আসবে। কত দ্রুত আসবে।
সরকারপ্রধান বলেন, কোনো দেশ বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে কোনো প্রকল্প দিলে আমি কিন্তু সেই প্রকল্প গ্রহণ করি না। সেটা আপনাদের আমি জানিয়ে দিচ্ছি। সেটা আমি করবও না। আমার দেশের জন্য প্রযোজ্য যেটা আমরা সেটাই করব। সামরিক শাসকদের সময় প্রকল্পের নামে টাকা লুট হতো জানিয়ে তিনি বলেন, একসময় সামরিক শাসকদের সময় কী ছিল, অনেক টাকা দিয়ে প্রজেক্ট বানায়, ওই টাকা পরের কাছে তুলে দেওয়া এবং তাদের কাছে কমিশন খাওয়া। আমার দেশের টাকা আমি তুলে দেবো আরেকজনের হাতে? আর তার কাছ থেকে আবার কমিশন খাবো? ঘুষ নেবো? এই ধরনের মানসিকতা কেন থাকবে। এটা তো আত্মহননের শামিল। বরং একটা টাকা বাঁচাতে পারি কিনা, সেই চেষ্টাটাই করতে হবে।
অনেক দেশ পদ্মা সেতুর মতো সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে আমাদের সক্ষমতা শুধু দেখাইনি, আমাদের যারা সেখানে কাজ করেছেন, আমাদের প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সবারই নিজস্ব অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন যেমন অনেক দেশ আমাদের কাছে আসছে, ব্রাজিল তাদের অ্যামাজনে ব্রিজ বানাতে চায়। আমরা বলেছি, আমাদের লোকজন রেডি আছে, যখনই দরকার আমরা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, পদ্মা সেতু নিয়ে যখন কথা উঠল এবং টাকা বন্ধ করে দিল, সঙ্গে সঙ্গে অন্য জিনিসগুলো (সংস্থা) তারাও টাকা বন্ধ করল দুর্নীতির অভিযোগে। চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম যে, প্রমাণ করতে হবে। এর আগে বহুবার বহু ক্ষেত্রে ওই বিএনপি-এরশাদের আমলে অনেক জায়গা থেকে টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের কিন্তু চ্যালেঞ্জ দেওয়ার মতো মনের শক্তি ছিল না। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। আপনাদের প্রমাণ করতে হবে কোথায় দুর্নীতি? তারা পারেনি। কানাডার ফেডারেল কোর্ট বলে দিয়েছে সমস্ত অভিযোগ ভুয়া, মিথ্যা। 
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ বাস্তবায়ন করবে যাতে দেশের কেউ আর ভোগান্তির শিকার না হয় এবং এতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম একটি সম্মানজনক ও উন্নত জীবন পাবে। আশা করি, আপনারা (প্রকৌশলীগণ) বিষয়টি মনে রেখে কাজ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেন, তার সরকার কখনোই কোনো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে না। যে বিষয়টির ওপর তিনি সর্বদা জোর দেন তা হলো কোনো পরিকল্পনা দেশের জনগণের জন্য সর্বোত্তম সুবিধা বয়ে আনবে এবং সরকার তা থেকে আয় করতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্প নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু প্রকল্পগুলো শেষ হলেই এর সুফল সাধারণ মানুষ ভোগ করছে।
যারা এসব মেগা প্রকল্পের সমালোচনা করেন তারা কী বলতে চান? প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে প্রকল্পই নেই না কেন, প্রথমেই আমরা ভাবি দেশের মানুষ কতটা উপকৃত হবে। আর সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কী রিটার্ন হবে এবং কত দ্রুত সেটা আসবে। তিনি বলেন, সরকার যে উন্নয়ন করেছে তা রাজধানী কেন্দ্রিক নয়। আমরা গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত উন্নয়ন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ, যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হওয়ায় গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে অভিবাসনের প্রবণতা কমেছে। সারাদেশে শতাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বিচারে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে দেওয়া হবে না। আমরা শিল্পায়নের জন্য বিশেষ অঞ্চল সৃষ্টি করেছি- যেখানে সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমাদেরকে আবাদি জমিকে রক্ষা করতে হবে। তিনি দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল