• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

২১১ উপজেলা গৃহহীন মুক্ত হচ্ছে আজ

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩  

‘গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ষাটোর্ধ্ব বলরাম কর্মকার। দিনে যা উপার্জিত হয় তা দিয়েই চলছিল সংসার। এরপর স্ত্রী ও ছেলে দু’জনই অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক ঋণের বোঝা চেপে বসে মাথায়। সামান্য একটু ভিটেমাটি ছিল, সবকিছু বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করেন। সর্বস্ব হারিয়ে হতাশ এই মানুষটি উপায় না দেখে ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি ঘর পান। ঘরের সঙ্গে দুই শতাংশ জমি। জমিসহ পাকা ঘর পাওয়ার আনন্দে বাকরুদ্ধ বলরাম কর্মকার। তার শুধু এটুকুই প্রতিক্রিয়া- হাজার বছর বেঁচে থাকুক শেখের বেটি।’
শুধু বলরাম কর্মকারই নন, মুজিববর্ষের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গত তিন বছর ধরে সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীন ১৩ লাখ মানুষ জমিসহ বিনামূল্যে নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে এখন আত্মহারা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতিহাস সৃষ্টিকারী এমন মানবিক উপহার গত তিন বছরে এই ১৩ লাখ মানুষের ভাগ্যই বদলে দিয়েছে।


দিনমজুর, রিক্সাচালক, ভিক্ষুক, বেদে, জেলে, মুচিসহ ঠিকানাবিহীন মানুষগুলোকে জমিসহ ঘর উপহার দিয়ে তাদের আজীবনের কষ্টই লাঘব করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবার প্রতি ৫ জন হিসেবে এ কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।


আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে চতুর্থ পর্যায়ে জমির মালিকানাসহ আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি গৃহহীন পরিবারকে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় ঘর হস্তান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে যুক্ত থেকে দীর্ঘদিন ঠিকানাবিহীন ভূমিহীন-গৃহহীন এসব পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করবেন। চতুর্থ পর্যায়ে এই ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশের ৯টি জেলার ২১১টি উপজেলা সম্পূর্ণরূপে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হচ্ছে।

ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গীকার- ‘দেশে একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন কিংবা ঠিকানাবিহীন থাকবে না।’ সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে ঠিকানাবিহীন মানুষকে এসব ঘর প্রদান করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। যা সারা বিশ্বকেই ইতোমধ্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অনেক উন্নত দেশও যেটি পারেনি, সেটি বাস্তবে করে প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন- ‘বাংলাদেশ সব পারে’।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারের মাঝে নির্মিত দুই শতাংশ জমিসহ দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর হস্তান্তরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহতি কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। 


মুখ্য সচিব জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সাল থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে সারাদেশে উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ জন। এরা সবাই জমির মালিক হয়েছেন, ঘরের মালিক হয়েছেন। এই কর্মসূচির একটা বড় দিক হচ্ছে- প্রতিটি পরিবারের স্বামী-স্ত্রীকে দুই শতক জমির মালিকানার দলিল করে দেওয়া হচ্ছে। সান্ত¡না না সেই সঙ্গে তাদের নামজারি সম্পাদন করে দেওয়া হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব ডিজাইনে এসব ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। 
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি, তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। 
আজ বুধবার চতুর্থ পর্যায়ে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর হস্তান্তর করা হচ্ছে। এতে করে চিহ্নিত ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি পরিবারের মধ্যে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর সম্পন্ন হচ্ছে। অবশিষ্ট ৪৩ হাজার ৪১০টি পরিবারের মধ্যে ২২ হাজার ১০টি পরিবার চিহ্নিত করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই শতাংশ জমিসহ একক গৃহ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বাকি ২১ হাজার ৪০৪টি পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে ‘দেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না’ বলে দেওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে। 
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, স্বামী-স্ত্রীর যৌথ মালিকানায় দুই শতাংশ জমি দলিল ও নামজারি করে দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর হস্তান্তর করা হচ্ছে। তারা এই জমির পুরোপুরি মালিকানা পাচ্ছেন। তবে শর্তানুসারে তারা জমি হস্তান্তর করতে বা বন্ধক দিতে পারবেন না। ভবিষ্যতে গৃহ সংস্কারের প্রয়োজন হলে মালিকানা হিসেবে তারাই সেটা করবেন।


মুখ্য সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবার প্রতি ৫ জন হিসেবে এ কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প সরাসরি পুনর্বাসন করেছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবার (প্রায় ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৯৮৫ জনকে)। ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সমধর্মী কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে অবশিষ্ট ২ লাখ ১৬ হাজার ৭০৪ পরিবার।
সারাদেশের সব উপজেলায় একযোগে আজ বুধবার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের মাঝে ২ শতাংশ জমির মালিকানাসহ ৩১ হাজার ৩৬৫টি একক গৃহ হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সারাদেশের সব উপজেলায় একযোগে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষদের কাছে এসব গৃহ হস্তান্তর করবেন।
ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি ৩টি উপজেলায় উপকারভোগীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করবেন। উপজেলাগুলো হলো- গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প; সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশাল জেলার বানারিপাড়া উপজেলার বানারিপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প।
উল্লেখ্য, সরকার ২০১৬ সালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কোন জেলায় কতজন গৃহহীন, ভূমিহীন, ঠিকানাবিহীন বা জমি আছে ঘর নেই- এমন মানুষের তালিকা তৈরি করে। ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তথ্য মতে, ওই পর্যন্ত দেশে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ ছিলেন যারা ভূমিহীন, গৃহহীন ও জমি আছে কিন্তু ঘর নেই। ওই তালিকা থেকেই এখন সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা হচ্ছে। 

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল