• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ বিশ্বমানের হচ্ছে

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২২  

বিশ্বমানের হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ। পদ্মা রেললিংক ও খুলনা-মোংলা রেলপথ দুদেশের যোগাযোগে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। বর্তমানে দুদেশের মধ্যে যে পরিমাণ যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করছে, এ প্রকল্পটি শেষ হলে তা অনেক বেড়ে যাবে। যাত্রার সময় কমে আসবে প্রায় ৫ ঘণ্টা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে যে কটি রুটে ট্রেন চলাচল করছে, সেগুলোতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছেন দুদেশের ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। যোগাযোগ বৃদ্ধি হলে উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ লাভবান হবেন বলে তারা জানান। 


নয়াদিলি­তে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শাস্ত্রী ভবন মিলনায়তনে শনিবার সকালে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ। ভারতের সঙ্গে যেসব সীমান্ত রাষ্ট্র রয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে হৃদয়ের। আমরা দুদেশের মধ্যে দিন দিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগ স্থাপনেও দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। দুদেশের মধ্যে যে সড়কপথ রয়েছে, সেগুলোরও উন্নয়ন হচ্ছে। পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। বাণিজ্য দিন দিন বাড়ছে। 

অরিন্দম বাগচি বলেন, বাংলাদেশ থেকে সাধারণ মানুষ ভারতে প্রচুর আসে। আমরা তাদের সব সময়ই স্বাগত জানাই। বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। দুদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপন আরও বাড়ছে। রেল যোগাযোগ স্থাপনে দুদেশ হবে বিশ্বমানের। ভারতীয় অর্থায়নে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। আরও কয়েকটি স্থাপন করা হচ্ছে। খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। এসব প্রকল্প দুদেশের বাণিজ্য ও যাত্রী পরিবহণে ভূমিকা রাখবে।  নিশ্চয় দুদেশের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ট্রেন চলবে। যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনও চলবে। এতে দুদেশের ব্যবসায়ীরাও দারুণ লাভবান হবে। 

তিনি বলেন, আমরা চাই, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে। যোগাযোগ স্থাপন যত আধুনিক হবে, উন্নত হবে ততই সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। ট্রেন ভ্রমণ সময়ই সাশ্রয় ও আরামদায়ক। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ ভারতে আসেন। রেল যোগাযোগ স্থাপন বৃদ্ধি হলে সেই সংখ্যাটাও বাড়বে। একইভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে যাচ্ছে ভারতীয় জনগণ।

মতবিনিময় সভায় কথা হয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (বাংলাদেশ মিয়ানমার ডিভিশন) পলোমি ত্রিপাঠীর সঙ্গে। তিনি বলেন, দুদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করতে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে রেল রুটগুলো রয়েছে, সেগুলো দিয়ে আরও ট্রেন চালানো যায় কিনা তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী ভারতে এসেছিলেন, বিষয়গুলো নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। সময়ের সঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন বৃদ্ধি এগিয়ে যাচ্ছে। 

এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশের রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধিসহ ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন বৃদ্ধি করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা চলছে। গত অর্থবছরে শুধু মাত্র ভার থেকে মালবাহী ট্রেনে যে পরিমাণ মালামাল বাংলাদেশে এসেছে, তা থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় করেছে রেল। আমরা চাচ্ছি, যেসব ওয়াগন ভারত থেকে দেশে এসে খালি যাচ্ছে, যেগুলো দিয়ে বাংলাদেশ থেকেও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতে রপ্তানি হোক। পদ্মা রেললিংক স্থাপন হলে ওই রুট দিয়ে কলকাতার সঙ্গে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনও চালানো হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে কলকাতা টার্মিনাল রেলওয়ে স্টেশনের দূরত্ব ৫৩৩ কিলোমিটার। এখন ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা হয়ে দর্শনা দিয়ে কলকাতায় পৌঁছে প্রায় ১১ ঘণ্টায়। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ সম্পূর্ণ হলে এ পথে যশোর হয়ে বেনাপোল দিয়ে কলকাতায় ট্রেন পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ৩ ঘণ্টা। রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মৈত্রী এক্সপ্রেস যথাযথ গতি নিয়ে চলতে পারে না। তাছাড়া যমুনা সেতুর দুপ্রান্তে একেবারেই গতি কমিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। সেতুর ওপর মাত্র ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার গতি নিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস চালাতে হয়। পদ্মা সেতুতে গতি না কমিয়েই ট্রেন চালানো যাবে। একইসঙ্গে মালবাহী ট্রেনও যথাযথ গতি নিয়ে পদ্মা সেতুতে চলবে।

নয়াদিল্লিতে এফআইসিসিআই ভবনে শুক্রবার কথা হয় এফআইসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ পরিচালক গৌতম ঘোষের সঙ্গে। তিনি জানান, উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা চান রেলপথে মালামাল আনা-নেওয়ায় আরও উন্নত হোক। সড়কপথের চেয়ে রেলপথে পণ্য আনা-নেওয়া যেমন সহজ তেমনি সাশ্রয়ী। আরও নতুন রেলপথ হলে ওই পথে দুদেশের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল