সৌদিতে স্বাধীন ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশিরা

আইন সংশোধনের মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জনশক্তি নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে সৌদি আরব সরকার। সরকারের নেয়া এমন উদ্যোগে অভিবাসী নাগরিকদের সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির বাণিজ্য উপমন্ত্রী প্রকৌশলী আয়েদ আল-ঘোয়াইনাম। এর মাধ্যমে এখন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজ নামে বিনিয়োগ করে স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ পাবেন। প্রবাসীদের এখন থেকে কোনো সৌদি নাগরিকের সহায়তা লাগবে না। এর আগে সৌদি আরবে ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে হলে সৌদি নাগরিকের সঙ্গে যৌথ মালিকানার প্রয়োজন হতো প্রবাসীদের। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে সৌদি গেজেট ও বাংলাদেশ দূতাবাস। এদিকে অন্য এক আইনের মাধ্যমে আরও বেশিসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিকে দেশটিতে কাজের সুযোগ দেয়া হয়েছে। সৌদি গেজেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তিমালিকাধীন প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি ও ভারতীয় কর্মিসংখ্যার সর্বোচ্চ সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত করেছে সৌদি সরকার।

বৃহস্পতিবার দেশটির মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয় বেসরকারি খাতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের এই সীমা নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছে। এখন থেকে সৌদি আরবের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ মোট কর্মীর সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ বাংলাদেশি নিয়োগ দিতে পারবে। অন্যদিকে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বৃহস্পতিবার জানায়, সৌদিতে ব্যবসা পরিচালনা ও বিনিয়োগ নীতি বাংলাদেশিদের জন্য নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।

এই নতুন সুযোগ নিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় চেম্বার অব কমার্স ও বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে বুধবার এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও অভিবাসীরা অংশ নেন। ওয়েবিনারে নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য নীতির আওতায় সব ব্যবসা ও বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্যাদি আগামী ২৩ আগস্ট ২০২১ তারিখের মধ্যে সৌদি সরকারকে অবহিত করে তাদের ব্যবসা নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধনে ব্যর্থ হলে অ্যান্টি কমার্শিয়াল কনসিলমেন্ট আইনের আওতায় বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।

একই সঙ্গে নতুন এ নীতির আওতায় ৮ লাখ সৌদি রিয়াল সমপরিমাণ অর্থ এককালীন বিনিয়োগের মাধ্যমে সৌদি আরবে নতুন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী হিসেবে যেকোনো অভিবাসীর নিবন্ধনের সুযোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া ১ লাখ সৌদি রিয়াল দেয়ার মাধ্যমেও এক বছরের জন্য বিনিয়োগকারী হিসেবে নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে।

ভিশন-২০৩০-এর আওতায় শ্রমবাজারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন ধরেই পরিবর্তন আনছে সৌদি সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবের অভ্যন্তরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে দেশটি। ওয়েবিনারে সৌদি কর্তৃপক্ষ আগামী ২৩ আগস্ট ২০২১ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশিসহ ভিনদেশী ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য বিনিয়োগের তথ্যাদি প্রদান করে নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে। বাণিজ্য উপমন্ত্রী প্রকৌশলী আয়েদ আল-ঘোয়াইনাম সৌদি আরবে বসবাসরত সব বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে অব্যাহত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার আশ্বাস এবং বাংলাদেশ থেকে নতুন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের সৌদি আরবে আমন্ত্রণ জানান।

সভায় বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করা হয়। সভায় ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও ওয়েবিনার আয়োজনের বিষয়ে চেম্বার কর্মকর্তারা সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, সৌদিতে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা নতুন এ সুযোগ নিয়ে বৈধভাবে সৌদি আরবে ব্যবসা পরিচালনা করবেন।

ওয়েবিনারে সৌদি সরকারের পক্ষে বাণিজ্য উপমন্ত্রী প্রকৌশলী আয়েদ আল-ঘোয়াইনাম, অ্যান্টি কমার্শিয়াল কনসিলমেন্টবিষয়ক জাতীয় কমিটির প্রধান আহমাদ আল-সুয়াইলেম, বাণিজ্যবিষয়ক পূর্বাঞ্চলীয় ও জাতীয় কমিটির সভাপতি হানি আল-ফালেকসহ চেম্বারের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষে ইকোনমিক কাউন্সেলর মুর্তুজা জুলকার নাঈন নোমান ও অন্য কর্মকর্তারা অংশ নেন। গত ৩০ জুন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম(বার) দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবদুল হাকিম আল খালদি এবং মহাসচিব আবদুল রহমান আল ওয়াবেলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে ভিশন-২০৩০-এর আওতায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের নেয়া নতুন বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ নীতিমালা এবং অ্যান্টি কমার্শিয়াল কনসিলমেন্ট আইন বিষয়ে আলোচনা হয়।

রাষ্ট্রদূত এ সময় সৌদি আরবে বসবাস ও ব্যবসারত বাংলাদেশি অভিবাসীদের এই নতুন আইন, বাধ্যবাধকতা এবং সর্বোপরি এর আওতায় ব্যবসা ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে চেম্বার অব কমার্সের সহায়তা প্রত্যাশা করেন। এর ধারাবাহিকতায় পূর্বাঞ্চলীয় চেম্বার সভাপতি বাংলাদেশের অভিবাসী ব্যবসায়ীদের জন্য বুধবার এই ওয়েবিনার আয়োজন করেন।