থাকা ও দুই বেলার খাবার ফ্রি ১১৪ বছরের মুসাফিরখানায়
আজকের টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২২
মুসাফিরখানা নামটি শুনে আমাদের দেশের অনেকেই আশ্চর্য হতে পারে। এ যুগেও কি বাংলাদেশে মুসাফিরখানা সম্ভব! বাস্তবতা হলো ১১৪ বছর ধরে নওগাঁর পোরশা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা পোরশা গ্রামে (মিনা বাজার) মুসাফিরখানাটি তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। এখানে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ নিরাপদে রাত্রিযাপন করতে পারে।
প্রবীণদের ভাষ্যমতে, ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের পর তৎকালীন বাদশা আলমগীরের আমলে ইরান থেকে হিজরত করতে বাংলাদেশের বরিশালে আসেন কয়েকজন শাহ্ বংশের মুরব্বী। এদের মধ্যে ফাজেল শাহ্, দ্বীন মোহাম্মদ শাহ্, ভাদু শাহ্, মুহিদ শাহ্, জান মোহাম্মদ শাহ্, খান মোহাম্মদ শাহ্ অন্যতম।
পরবর্তীতে বরিশাল থেকে তারা আসেন নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার পোরশা গ্রামে। যদিও সে সময় এখানে কোনো বসতবাড়ি ছিল না। চারিদিকে ছিল শুধু বন-জঙ্গল। তারপরেও এলাকাটি ভাল লাগায় তারা এখানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করার পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এখানকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠায় তারা আর পোরশা ছেড়ে যাননি। এখানে বসবাস করার সুবাদে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম জমিদারি করেন।
তাদেরই এক বংশধর খাদেম মোহাম্মদ শাহ। তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু তার সৃষ্টি এখনো রয়ে গেছে। মানুষ বিভিন্নভাবে তার এই সৃষ্টি থেকে উপকৃত হচ্ছে।
বরেন্দ্র ভূমি খ্যাত প্রত্যন্ত এলাকার পোরশা গ্রাম (মিনা বাজার)। একসময় গ্রামটি গাছ ও ঝোপঝাড়, জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। শত বছর আগে মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে পায়ে হেঁটেই চলাচল করত। হেঁটে চলাচল করতে গিয়ে নেমে যেত সন্ধ্যা। দিনের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরা সম্ভব হতো না। সে সময় চোর-ডাকাতের উপদ্রব ছিল। সন্ধ্যার পর চারিদিকে শুধু সুনসান নীরবতা, ঝিঁঝিঁপোকা ও শিয়ালের ডাক। স্বাভাবিকভাবেই মনের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করত। আশপাশে কোন আবাসিক ভবন ছিল না। সন্ধ্যার পর মানুষ আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করত। কেউ কোনো বাড়িতে আশ্রয় পেত, আবার কারও ভাগ্যে জুটত ভোগান্তি।
পথশ্রান্ত মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে তাদের আশ্রয় দেবার জন্য ১৯০৮ সালে তৎকালীন জমিদার খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ মাটির ঘর তৈরি করে মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ঘরটির নাম দেন 'মুসাফিরখানা'।
মুসাফিরদের থাকা-খাওয়ার খরচ বহনের জন্য মুসাফিরখানার নামে ৮০ বিঘা জমিও লিখে দেন খাদেম মোহাম্মদ শাহ্। এই সময় মুসাফিরখানা খুঁজে পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া।
পথিক শুধু রাতযাপন করে তা নয়, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। ৮০ বিঘা জমিতে যে ফসল হয় সেই টাকা দিয়ে চলে এই মুসাফিরখানা।
বর্তমানে রাস্তাঘাট পাকাকরণ ও যোগাযোগব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তারপরও মুসাফিরখানায় অতিথিদের আনাগোনা থাকে।
উপজেলাটি পোরশা হলেও সব প্রশাসনিক কার্যক্রম নীতপুর বাজারে। মুসাফিরখানাটি পোরশা গ্রামের প্রাণকেন্দ্র মিনা বাজারে। নীতপুর থেকে পশ্চিমে ৬ কিলোমিটার দূরে এবং জেলা শহর নওগাঁ থেকে পূর্ব দিকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে মিনা বাজার অবস্থিত। এছাড়া বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে উত্তর-পশ্চিমে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবিস্থত।
বাজারের প্রধান সড়কের লাগোয়া পূর্ব-পশ্চিম লম্বা দ্বিতল ভবন। মুসাফিরখানায় প্রবেশের আগেই রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। আর মাথার ওপর ঝুলানো সাইনবোর্ডে লেখা 'পোরশা মোসাফিরখানা'।
পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে মুসাফিরখানার জমির ফসল বিক্রির অর্থ থেকে দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনে রয়েছে বিভিন্ন নকশায় শিল্পের সমারোহ। মোজাইক করা মেঝেতে গালিচা বিছানো। এখানে একটি কমিউনিটি সেন্টারও আছে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এই কমিউনিটি সেন্টারটি ভাড়া দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে প্রায় ১৬টি ঘর রয়েছে এখানে। একসঙ্গে ৫০-৬০ জন এখানে থাকতে পারে। ঘরে আছে খাট, তোষক, বালিশ ও ফ্যান। মুসাফিরখানার উত্তরপাশে রয়েছে শানবাঁধানো ঘাটওয়ালা পুকুর। ক্লান্ত পথিক স্বচ্ছ পানিতে ওজু ও গোসল করে ক্লান্তি দূর করেন।
একজন মুসাফির সর্বোচ্চ তিন দিন থাকতে পারেন মুসাফিরখানায়। থাকার পাশাপাশি দুপুর ও রাতে বিনামূল্যে খাবার সুবিধা পান। তবে খাবারের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। কেউ যদি মুসাফিরখানার খাবার খেতে না, চান তাহলে তাকে যেতে হবে ৬ কিলোমিটার দূরে নীতপুর বাজারে অথবা ২ কিলোমিটার দূরে সরাইগাছী বাজারে। স্থানীয় মিনা বাজারে দুটি ছোট খাবারের হোটেল থাকলেও তা অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। মুসাফিরখানায় যিনি একবার থেকেছেন, অন্তত দুই মাস পর তিনি ফের থাকতে পারবেন।
মুসাফিরখানার সেবক মিজানুর রহমান বলেন, 'কেউ দুদিনের জন্য আবার কেউ তিন দিনের জন্য মুসাফিরখানায় থাকেন। তাদের জন্য থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। প্রতিদিনই গড়ে ৪-৫ জন থাকেন। মুসাফিররা আশপাশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলো ঘুরে দেখেন। দূরদূরান্ত থেকে মুসাফিররা আসেন।'
মুসাফিরখানার ম্যানেজার ও স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে এখানে চাকরি করছেন। মুসাফিরদের থাকা-খাওয়া ও সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন তিনি।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'মুসাফিরখানার নামে ৮০ বিঘা জমি আছে। এর আয় থেকে খরচ বহন করা হয়। এছাড়া স্থানীয়রাও অর্থ দিয় সহযোগিতা করে থাকেন। এখানে দুবেলা (দুপুর ও রাত) খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। যদি কেউ দুপুরে খেতে চান, তাহলে সকাল ৯টা এবং রাতে খেতে চাইলে বিকেল ৪টার মধ্যে বলতে হবে। থাকতে চাইলে অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অনেকে মুসাফিরখানায় থাকতে চাইলেও খেতে চান না।'
সিরাজুল জানান, প্রতি বুধবার দুপুরে স্থানীয় ও অসহায়দের একবেলা খাবার দেওয়া হয়। সেখানে প্রায় ৪০-৫০ জন খাবার খেয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি মানুষ হয় রমজান মাসে। রমজানের ২০ থেকে ২৯ তারিখে প্রতিদিন ২০০-৩০০ জনের খাবারের আয়োজন করা হয়। এছাড়া প্রতিদিন ইফতার করে প্রায় ৪০০ জন।
রমজান মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয় বলে জানালেন সিরাজুল। বছরের অন্য সময় প্রতি মাসে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।
পোরশা মুসাফিরখানার সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম শাহ। গত ১০ বছর থেকে তিনি এ পদে আছেন। তিনি বলেন, 'আমাদের এলাকাটি প্রত্যন্ত। মুসাফিরখানাটি যখন প্রতিষ্ঠান করা হয়েছিল সে সময় যোগাযোগব্যবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এলাকার বাইরের কেউ এলে কাজ শেষ করে ফিরে যাওয়াটা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টের ছিল। এছাড়া কোথায় থাকবেন বা কী খাবেন তার কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।
'১৯০৮ সালে মাটি দিয়ে মুসাফিরখানার ঘর তৈরি করা হয়েছিল। এ ঘরে প্রায় ৮০ বছর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে মুসাফিরখানার জমির আয় থেকে দ্বিতল পাকা ভবন তৈরি করা হয়। আমাদের এলাকায় কোনো আবাসিক হোটেল নাই। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসাফিররা এখানে আসেন, থাকেন এবং ঘুরে দেখেন।'
মঞ্জুরুল ইসলাম শাহ বলেন, 'মুসাফিরখানার নিজেস্ব সম্পদ রয়েছে যা দিয়ে পরিচালনা করা হয়। এছাড়া এলাকাবাসীরাও নানভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন।'
- টাঙ্গাইল শাড়িসহ নতুন ১৪ পণ্য পেল জিআই সনদ
- এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
- বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ
- হজযাত্রীদের সহযোগীতার আশ্বাস সৌদির
- ব্যাংক একীভূত হলেও আমানত সুরক্ষিত থাকবে: বাংলাদেশ ব্যাংক
- ডিজিটাল পেমেন্ট বাড়াতে সহায়তা দেবে আইএফসি
- এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টা, ৫০% লিখিত
- হিট অ্যালার্ট আরো তিনদিন বাড়লো
- র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
- কুমিল্লায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে
- লক্ষ্মীপুরে দিনব্যাপী হজ্জযাত্রীদের প্রশিক্ষণ
- গ্যাটকো মামলা : খালেদা জিয়াসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ২৫ জুন
- আত্মসাতের মামলায় সাইমেক্স লেদারের এমডি ও তার স্ত্রী কারাগারে
- বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মরিশাসের প্রতি আহ্বান
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল দিতে সরকার নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছে
- নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা পেলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হবে
- নীলফামারীতে ‘হিটস্ট্রোক’ সচেতনতায় সেমিনার
- নওগাঁয় উফশী আউশ চাষে ৫৮ হাজার কৃষককে প্রণোদনা
- শেখ হাসিনা ইসলামকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন না
- সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত তিন বিচারপতির শপথ কাল
- শাবিপ্রবিতে ডিজিটাল এটেন্ডেন্স সিস্টেমের উদ্বোধন
- নাটোরে অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান
- কক্সবাজারে ভোটার তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা চেয়ে আদেশ
- মন্ত্রী-এমপি’র স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা
- উত্তর কোরীয় প্রতিনিধি দলের ইরান সফর
- সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ জন বিচারপতি নিয়োগ
- কুমিল্লার সফল খামারীদের মাঝে চেক ও পুরস্কার বিতরণ
- ভোলায় ৬০ লাখ মিটার অবৈধ জাল জব্দ
- বগুড়ায় আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস পালিত
- সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে
- আজ ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী
- বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠন: প্রধানমন্ত্রী
- আমাদের সকল প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে গেছে মুজিব নগর সরকার
- এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
- হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে যে নির্দেশনাগুলো দিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর
- ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচার সংবর্ধনা
- আজ আপনার জন্মদিন হলে জেনে নিন রাশিফল
- সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির এক সন্ত্রাসী নিহত
- আগামীতে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের অন্যতম স্মার্ট
- উন্মুক্ত হতে পারে কুয়েতের শ্রমবাজার
- চালের বিকল্প হিসেবে গম আমদানি করছে সরকার
- শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ
- ভেন্ডিং মেশিনে পাওয়া যাবে ট্রেনের টিকিট, আর নয় টিকিটের লাইন
- যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব বাঁচত
- রেলসেতুতে যুক্ত হলো যমুনার দুই পার
- বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতে চায় কিরগিজস্তান
- বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মরিশাসের প্রতি আহ্বান
- কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা
- কুমিল্লায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে
- শোকজ শুরু বিএনপির পদধারী প্রার্থীদের