• শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২০ ১৪৩১

  • || ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষায় স্থবিরতা কাটছে

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২৪  

দেড় মাসের বেশি সময় ধরে থমকে আছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলন ও সরকার পতনের পর টালমাটাল সব পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম। দফায় দফায় প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করায় তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। সম্প্রতি অধিকাংশ পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদত্যাগে প্রশাসনিক শূন্যতাও বেড়েছে।

শিক্ষা প্রশাসনের সব পর্যায়ে এখনো অনুপস্থিত বেশ কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। প্রশ্নপত্র পুড়ে যাওয়ায় শঙ্কা দেখা দেয় এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েও। তবে নতুন করে এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। এরসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে আগামী রবিবার। ফলে শিক্ষায় যে স্থবিরতা নেমে এসেছিল তা কাটতে শুরু করেছে।
চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কয়েক ধাপে স্থগিত হওয়ার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। স্থগিত পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড এ তথ্য নিশ্চিত করে। এদিন দুপুরে ঢাকা মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে এ সময়সূচি প্রকাশ করা হয়।

এর আগে গত ৩০ জুন সিলেট শিক্ষা বোর্ড বাদে সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার। সূচি অনুযায়ী, এখনো ১৩ দিনের মোট ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি। বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ের এতগুলো পরীক্ষা আটকে গেছে। 
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জনকণ্ঠকে জানান, মন্ত্রণালয়ের আদেশ পাওয়ার পর পূর্ণোদ্যমে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। থানাগুলোতে প্রশ্নপত্র পুড়ে যাওয়ায় নতুন করে তৈরি হচ্ছে প্রশ্নপত্র। এরই মধ্যে বিজি প্রেসে কিছু প্রশ্ন ছাপার কাজও শুরু হয়েছে। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় কোনো উত্তরপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।
জানা যায়, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৩টি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এরমধ্যে বাধ্যতামূলক বাংলা ও ইংরেজির চারটি বিষয় (প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র) এবং আইসিটি। ৮টি বিষয় ঐচ্ছিক (অপশনাল)। সর্বশেষ সব পরীক্ষা স্থগিত করে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচি প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী আগামী ৮ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল।

তবে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সরকারের পদত্যাগ ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানায় বোর্ডগুলো। এর পর নতুন সূচি প্রকাশ করায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরেছে।
অভিভাবক রেবেকা পারভীন জানান, নানা সময়ে পরীক্ষা হবে না, কিভাবে হবে এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব চলছিল। আমার মেয়েও এসব দেখে হতাশ হয়েছে। পুনরায় সব পরীক্ষা দেওয়া লাগবে কী না এনিয়েও চিন্তার শেষ ছিল না। তবে বোর্ডের ঘোষণার পর হতাশা দূর হয়েছে। এখন ভালোমত পরীক্ষা শেষ হলেই বাচা যায়।
এদিকে আগামী রবিবার থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। এতে সই করেছেন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার। অফিস আদেশে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ আগস্ট রবিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হলো। এর ফলে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বিশ^াস জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা না থাকায় কোনো কলেজেই ক্লাস পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে নির্দেশনা আসায় ক্লাসগুলোতে প্রাণ ফিরবে। 
মাউশি সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর শিক্ষা ভবনসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক কর্মকর্তা অনুপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে অনেকেই এখনো অফিস করছেন না। তবে অধিকাংশ কর্মকর্তা অফিসে ফেরায় দপ্তরগুলোতে কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে শিক্ষাভবনের বিভিন্ন শাখায় কর্মকর্তাদের দেখা গেছে। তবে অধিকাংশই সকালে এসে হাজিরা দিয়ে অফিসের বাইরে চলে গেছেন। 
কতজন কর্মকর্তা অনুপস্থিত এ প্রসঙ্গে বিপুল চন্দ্র সরকার জানান, এখনো এই তালিকা করা হয়নি। ডিজিটাল হাজিরার বিষয়ে এ তথ্য তার কাছে নেই বলেও জানান তিনি। তার দাবি শিক্ষা ভবনে নানা কাজে এখনো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিজিটর কম আসছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে এটি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি মনে করেন। 
এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আগেভাগেই কর্মচঞ্চলতা ফিরেছে। দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় আগেই খোলা ছিল। তবে স্বাভাবিক ছিল না শ্রেণি কার্যক্রম। কিন্তু গত বুধবার থেকে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের পূর্ণোদ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। 

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জনকণ্ঠকে বলেন, এতদিন আমাদের স্কুলগুলো খোলা ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে শ্রেণি কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল না। এ কারণে আমরা বুধবার থেকে পূর্ণোদ্যমে স্কুলগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে আদেশ দিয়েছি। সে অনুযায়ী ক্লাস হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিকের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, দীর্ঘ দিন থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা ছিল। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতো না। তবে শিক্ষক ও কর্মচারীরা নিয়মিত হাজিরা দিতেন। কিছু কিছু জায়গায় পাঠদানও চলছিল। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সব স্কুলে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম চলছে।