• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

অস্বাভাবিক হারে রেমিট্যান্স আসছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে!

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৩  

গত কয়েক মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স আসার হার অনেকটা বেড়েছে। এটিকে অস্বাভাবিক মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। দেশ থেকে পাচার করা টাকা রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসছে কি না, তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার (২৭ মে) ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘স্টেট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি’ শীর্ষক সভায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রবাসী আয় প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি অর্থনীতির বিভিন্ন দিকের পর্যালোচনা তুলে ধরেন।


সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০৫ কোটি ডলার এসেছে। গতবার একই সময়ে ২৮৭ কোটি ডলার এসেছিল। অন্যদিকে গত জুলাই-এপ্রিলে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০৪ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮২ কোটি ডলার কম।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিদেশে লোক যাওয়া ও রেমিট্যান্স পাঠানোর মধ্যে একটা অসামঞ্জস্য আছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসছে, যা অস্বাভাবিক। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, পাচার করা অর্থ ফেরত আসছে। যেহেতু রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে আনলে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পাওয়া যায়, সেই সুযোগ কেউ কেউ নিয়ে থাকতে পারেন। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখতে পারে।

তিনি উল্লেখ করেন, পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনলে তার ওপর কর আরোপ করার বিধান রয়েছে। উল্টো এখন রেমিট্যান্স হিসেবে অর্থ দেশে এনে প্রণোদনার সুবিধা নেওয়া হচ্ছে কি না, তা দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডি আরও বলছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ ৩০ হাজার লোক সৌদি আরবে গেছেন। এ সংখ্যা ওই সময় প্রবাসে যাওয়া সাড়ে ২১ লাখ লোকের প্রায় ৫৭ শতাংশ। কিন্তু এই সময়ে সৌদি আরব থেকে আসা রেমিট্যান্স কমেছে, তবে বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। রেমিট্যান্স পাঠানোয় সৌদি আরবের জায়গা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যান্য প্রসঙ্গে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে প্রতি ডলারের দাম ১০৫ টাকা থেকে ১১৬ টাকার মধ্যে থাকবে, যার সঙ্গে বর্তমান দরের খুব বেশি পার্থক্য নেই। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নিতে পারে। এ বিষয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজারভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করা উচিত। এটি অনেক আগেই করা দরকার ছিল। আমরা দীর্ঘদিন ধরে টাকাকে শক্তিশালী রাখতে চেয়েছি। গত বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি-এসব কারণে স্থানীয় বাজারে ডলারের সরবরাহে টান পড়ে। ফলে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। সবশেষ ১০৮ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর বেশি দামেও ডলার বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, জ্বালানি তেলের দাম এখন লিটারে ৫-১০ টাকা কমানো যায়। তিনি বলেন, অকটেন, পেট্রোল, ডিজেলসহ জ্বালানি তেলে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি লিটারে এখন ৫ থেকে ১০ টাকার কমানোর সুযোগ আছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল কেনার পর বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতি লিটার ডিজেলে ৫ টাকা এবং প্রতি লিটার অকটেনে ১৩ টাকা মুনাফা করে।

সিপিডির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত এ ৭ বছরে বিপিসি মোট ৪৩ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা লাভ করেছে। কর দেওয়ার পর নিট মুনাফা ৩৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। আর এ সময়ে ৭ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা কর দিয়েছে বিপিসি।

এ বিষয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি খাতে বেশি ভর্তুকি দিয়েছে। এখানে এখন কিছু করা যেতে পারে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ে, তখন দেশের বাজারের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে, তখন স্থানীয় বাজারে দাম কমানো হয় না।

বাংলাদেশে গত আগস্ট মাসে হঠাৎ অকটেন, পেট্রোলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৩৩ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়। বৃদ্ধির ওই হার ছিল গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপর গ্যাস-বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়। এ ছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্যে বেশি দামে আমদানি করতে হয়েছে।
মূল্য বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতির প্রায় সব খাতেই প্রভাব পড়ে। বাড়তে থাকে পণ্যমূল্য এবং মূল্যস্ফীতির হার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি একলাফে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ হয়েছিল।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল