• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

শেষ প্রস্তুতি মেট্রোরেলের

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০২১  

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই মেট্রোরেল লাইন-৬ এর একাংশ চালু করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এরই মধ্যে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সেগমেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে দৃশ্যমান হয়েছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অংশের কাজ আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এর পরই চালু হবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। অন্যদিকে প্রকল্পের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে পূর্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫১ দশমিক ২৬ শতাংশ। মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ যখন শুরু হয়েছিল তখনই বলা হয়েছিল, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম মেট্রোরেল লাইন-৬ এর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনে জানিয়েছিল মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত একসঙ্গে মেট্রোরেল চালু হবে। সে লক্ষ্যে কাজও চলছিল। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী চলমান কভিড-১৯ মহামারীর কারণে মেট্রোরেল লাইন-৬ এর নির্মাণকাজ অনেকটা থমকে যায়। এর মধ্যেই প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ ধীরগতিতে চলতে থাকে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে আবার দ্রুতগতিতে কাজ শুরু হয় উত্তরা-আগারগাঁও অংশে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের তরফে আবারও সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছে। সরকার চাচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই মেট্রোরেল প্রকল্পের একাংশ সাধারণের জন্য খুলে দিতে। এ কারণে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ আগামী ডিসেম্বরের আগেই শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু যথাযথ সময়ে শেষ হলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর এমআরটি লাইন-৬ এর একাংশ খুলে দেওয়া হবে। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ডিসেম্বরের আগে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ করার। যাতে ১৬ ডিসেম্বর এই অংশ চালু করা যায়।  

এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণের জন্য মোট ৮টি প্যাকেজে কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে প্যাকেজ-০১ এর আওতায় ডিপো উন্নয়ন, প্যাকেজ-২ এর আওতায় ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ, প্যাকেজ-৩ ও ৪ আওতায় উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ হচ্ছে। এ ছাড়া প্যাকেজ-৭ এর আওতায় ইলেকট্রিক্যাল এবং মেকানিক্যাল সিস্টেম সরবরাহ ও নির্মাণকাজ এবং প্যাকেজ-৮ এর আওতায় রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ অন্যতম।
এমআরটি লাইন-৬ এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্যাকেজ-১ এর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৯ মাস আগে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি। প্যাকেজ-২ এর আওতায় ডিপো এলাকার পূর্ত কাজের অংশ হিসেবে ডিপোর অভ্যন্তরে ৫২টি অবকাঠামোর মধ্যে ৯টি অবকাঠামোর নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এই প্যাকেজের আওতায় অন্য কাজগুলোর মধ্যে সব স্থাপনার চারপাশে একই ধরনের সিরামিক টাইলস দিয়ে স্থাপত্যশৈলী নির্মাণ; স্ট্যাবলিং ইয়ার্ডে স্টিলের অবকাঠামো ও রুফ শিটিং; ডিপোর অভ্যন্তরে অবস্থিত ভবনসমূহের পূর্ত মেকানিক্যাল এবং বৈদ্যুতিক কাজ; ডিপোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সব পর্যায়ের লাইন নির্মাণ; কেন্দ্রীয় ওয়্যার হাউসের স্টিলের অবকাঠামো ও রুফ শিটিং এবং ইটিপি ও এসটিপির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ডিপো এলাকার পূর্ত কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ৮০ শতাংশ। প্যাকেজ-৩ ও ৪ আওতায় উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এ দুই প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। এরই মধ্যে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১১ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। ৯টি স্টেশনের সাব-স্ট্রাকচার নির্মাণ শেষ হয়েছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্ল্যাটফরমের স্ট্রিল-স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। পল্লবী স্টেশনের প্ল্যাটফরমের স্টিল-স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে মিরপুর-১১, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া স্টেশনের শেষ হওয়া ছাদের ওপর প্ল্যাটফরম স্টিল-স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনের মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও প্ল্যাম্বিংয়ের কাজ চলছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণের কাজ চলছে। এসব কাজের সার্বিক অগ্রগতি হচ্ছে ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রকল্পের প্যাকেজ-৭ এর আওতায় এরই মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম সরবরাহ ও নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশের। আর প্যাকেজ-৮ এর আওতায় রেল কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে জাপানে যাত্রীবাহী কোচ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। চলমান করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতে বিশেষ উদ্যোগে থার্ড পার্টি ইন্সপেকশনের মাধ্যমে মেট্রো ট্রেন সেট বাংলাদেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। আগামী এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মেট্রো ট্রেনের প্রথম চালান বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় চালানটি যথাক্রমে আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি ও আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলদেশে পৌঁছার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম ট্রেন সেট নিয়ে আসা হবে। প্রকল্পের অষ্টম প্যাকেজের অগ্রগতি হচ্ছে ৩৭ শতাংশ।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল