• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের টাঙ্গাইল

আজ নাগরপুর হানাদারমুক্ত হয়

আজকের টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০২০  

আজ ৯ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে নাগরপুর উপজেলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। চূড়ান্ত বিজয়ের ৮ দিন আগেই যৌথ বাহিনীর দুর্দমনীয় বীরত্বে মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করেন নাগরপুর উপজেলার বাসিন্দারা। এ উপলক্ষে উপজেলায় নানা কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

শুধু ১৯৭১ নয়, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে টাঙ্গাইলের চরাঞ্চল নাগরপুর বাসীর ভূমিকা প্রসংনীয়। ১৯৭১ সনের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি পর্বে টাঙ্গাইলে গঠিত হয় সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ। আর তাদের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সনের ৩ এপ্রিল টাঙ্গাইলে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়।
গণ পরিষদের সদস্যগণ ভারতে চলে গেলে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, মরহুম খন্দকার আব্দুল বাতেন, বুলবুল খান মাহবুব, সিদ্দিক বি.এস.সি সহ অনেক ছোট ছোট দল গঠিত হয়। এর মধ্যে সিদ্দিক বি.এস.সি বাতেন বাহিনীতে এবং অন্যান্য ছোট দল গুলো কাদেরীয়া বাহিনীতে একত্র হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যে ৩/৪টি বেসামরিক বাহিনীর উল্লেখ আছে, তার মধ্যে কাদেরীয়া বাহিনী ও বাতেন বাহিনী টাঙ্গাইল জেলাতেই অবস্থিত। মহান মুক্তিযুদ্ধে সারা পূর্ববাংলা যখন হায়নাদের হত্যাকান্ডে জ্বলছে তা থেকে নাগরপুর- থানা ও বাদ পরেনি। ধলেশ্বরী নদীদ্বারা বিচ্ছিন্ন এলাকাটি যখন হায়না ও দেশীয় রাজাকার, আলবদর দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত, তখন নাগরপুরকে মুক্ত করার জন্য কাদেরীয়া বাহিনী ও বাতেন বাহিনী কয়েকবার আক্রমণ রচনা করেও সুফল আনতে পারেনি।


 
নভেম্বর ২৯ ও ৩০ তারিখে এলাসিন ও কেদারপুরে কাদেরীয়া বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ কালে শত্রু পক্ষ সংবাদ জেনে ফেলে এবং বিমান থেকে ব্যাপক গুলি বর্ষনে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ১ ডিসেম্বর বাতেন বাহিনী সুবেদার আবু তাহের ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে থানা আক্রমণ করলেও সুফল আসে না। ৮ই ডিসেম্বর ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে কাদের সিদ্দিকির নেতৃত্বে ৭-৮টি কোম্পানী এবং বাতেন বাহিনীর কয়েকটি কোম্পানী চতুর দিক থেকে আক্রমণ রচনা করে। মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণে টিকতে না পেরে পরদিন অর্থাৎ আজকের এই দিনে বেলা ১২টা/সাড়ে বারোটার দিকে নিহত ছয়জন পাকসেনা ও ত্রিশ চল্লিশজন আহত সেনাদের নিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে পলায়ণ করে। এ যুদ্ধে কাদেরীয়া বাহিনীর ও বাতেন বাহিনীর কয়েকজন শহীদ হন।

অপরদিকে শত্রু পক্ষের ও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। দীর্ঘ নয় মাস অবরুদ্ধ থাকার পর নাগরপুর হানাদার মুক্ত হওয়ায় চতুরদিক থেকে সাধারণ মানুষ আত্মহারা হয়ে আনন্দ অশ্রুজলে নাগরপুরে ছুটে আসে, পরস্পর পরস্পরের সাথে কোলাকুলি ও জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে।

এ বিষয়ে সাবেক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ সুজায়েত হোসেন বলেন, জেলা সদরের ২দিন পূর্বে ৯ ডিসেম্বর নাগরপুর শত্রু মুক্ত হয়। আর সে থেকেই প্রতি বৎসর ৯ই ডিসেম্বর ব্যাপক কর্মসূচীতে আগামী প্রজন্মকে নাগরপুর হানাদার মুক্তির ইতিহাস অবহিত করে আসছে। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধু জাতির জনক, জাতিয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি ও অসীম ত্যাগে অর্জিত এই দেশকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

আজকের টাঙ্গাইল
আজকের টাঙ্গাইল